বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র
ইভিএম রাজনীতি চরমে। বিধানসভা পিছু পাঁচটির বেশি ভিভিপ্যাট গণনায় সায় দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। ইভিএমের আগে ভিভিপ্যাট গণনার আর্জিও খারিজ হয়েছে। ইভিএম-এ কারচুপির অভিযোগ তুলে স্ট্রং রুম পাহারায় বিরোধীরা। সব মিলিয়ে ইভিএম-এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েই কার্যত বিরোধীদের সেই সব প্রশ্নের জবাব দিলেন অমিত শাহ। ধারাবাহিক টুইটারে এক গুচ্ছ প্রশ্ন তুলে বিরোধীদের আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি সভাপতি।
লোকসভা ভোটের আগে কলকাতায় ব্রিগেড ময়দানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে বিরোধী জোটের ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া’ র্যালিতে ইভিএম-কে ‘চোর মেশিন’ বলেছিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা। তার পর সাত দফা ভোটের উত্তেজনায় সেই বিতর্ক কিছুটা পিছনের সারিতে চলে যায়। ভোট পর্ব শেষে বুথফেরত সমীক্ষার ফল বেরোতেই ফের ইভিএম নিয়ে সরব বিরোধীরা। বিজেপির অভিযোগ, সমীক্ষায় হারের ইঙ্গিত পেয়েই ইভিএম নিয়ে অভিযোগ আনতে শুরু করেছে ২২ দলের বিরোধী জোট।
ইভিএম-এ আগেও ভোট হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে যে বিরোধী দল ক্ষমতায় আছে, তাঁরাও ইভিএমের মাধ্যমেই নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনেই অমিত শাহের প্রথম প্রশ্ন, ‘‘অধিকাংশ বিরোধীরা যে ইভিএম নিয়ে অভিযোগ তুলছেন, তাঁরা যেন ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনে কখনও জেতেননি। তাঁরা যদি ইভিএম-এ বিশ্বাস না করেন, তাহলে এই দলগুলি নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতা নির্ধারণের পথে কেন যান?’’
বিধানসভা পিছু পাঁচটি ভিভিপ্যাট গণনার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তিনটি জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতে এই রায় দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। তার পরও আগে ভিভিপ্যাট গুণতে হবে, তার পর ইভিএম— এই দাবি নিয়ে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিরোধী জোটের নেতা-নেত্রীরা। এখানেই অমিত শাহ প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে কি সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা? উল্লেখ্য, আগে ভিভিপ্যাট গণনার দাবি খারিজ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশনও।
আরও পড়ুন: ফের ধাক্কা খেল বিরোধীরা, গণনায় আগে ভিভিপ্যাট মেলানোর দাবি খারিজ করল কমিশন
ভোটগণনার দু’দিন আগে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিবর্তনের দাবি তুলেছে ২২ দলের বিরোধী জোট। অমিত শাহের মতে, এই দাবি অগণতান্ত্রিক। কারণ, সব দলের সহমত ছাড়া এই প্রক্রিয়া সম্ভব নয়।
পরের প্রশ্নে বিজেপি সভাপতির বক্তব্য, বিরোধী দলগুলি ইভিএম-এ কারচুপি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে মূলত ষষ্ঠ দফার ভোটগ্রহণের পর থেকে। বুথফেরত সমীক্ষা সামনে আসার পর থেকে সেই অভিযোগ আরও জোরদার করেছেন বিরোধী জোটের নেতারা। অমিতের যুক্তি, বুথফেরত সমীক্ষা ইভিএম-এর উপর ভিত্তি করে হয় না, হয় ভোটারদের প্রশ্ন করে। তাহলে বুথফেরত সমীক্ষা ধরে ইভিএমের সত্যাসত্য নিয়ে কীভাবে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা?
আরও পড়ুন: বারণ করেছিলাম, তবু কেন ভোট দিলেন? বেলেঘাটায় রাস্তা আটকে শাসানি, দেখুন ভিডিয়ো
ইভিএম হ্যাক বা কারচুপি করা সম্ভব নয়, কেউ করতে পারলে করে দেখান— ভোটের আগে এমনই খোলা চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। অমিতের বক্তব্য, তখন বিরোধীরা কেউ সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেননি।
ষষ্ঠ তথা শেষ প্রশ্নে বিরোধীদের আক্রমণের ভাষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অমিত। তাঁর বক্তব্য, বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, ফল খারাপ হলে ‘রক্তগঙ্গা বইয়ে দেবেন’। তাঁদের দিকেই পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে অমিতের বক্তব্য, ‘‘আপনারাই বলুন, এই ধরনের উস্কানিমূলক ও অগণতান্ত্রিক ভাষা প্রয়োগ করে দেশকে কোন পরীক্ষার সামনে ফেলতে চাইছেন!’’
সব শেষে ইভিএম ইস্যুতে বিরোধীদের কড়া ভাষায় আক্রমণও করেছেন লোকসভায় আমদাবাদ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অমিত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ইভিএম নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ তোলা আসলে অসত্য এবং গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা। যা আমাদের উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও শক্তিশালী করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব।’’