সাংবাদিক বৈঠকে শরদ পওয়র। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে। পিটিআই
গোটা রাজ্যে কার্যত তিনিই ছিলেন বিরোধী শিবিরের একমাত্র মুখ। অথচ মহারাষ্ট্রের ভোটে তাঁর দল এনসিপি শুধু যে বিজেপি-শিবসেনা জোটের চোখে-চোখ রেখে লড়েছে তা-ই নয়, ছন্নছাড়া কংগ্রেসকেও অনেক জায়গায় জিততে সাহায্য করেছে বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। ফলে একার শক্তিতে মসনদ দখল করতে-চাওয়া বিজেপি পড়ে গিয়েছে রীতিমতো সমস্যায়। আজ তাই ফিনিক্স পাখির সঙ্গেই তুলনা হচ্ছে ‘মরাঠা স্ট্রংম্যান’ শরদ পওয়ারের।
অথচ পাঁচ মাস আগে লোকসভা ভোটে গোটা রাজ্যে এনসিপি কার্যত মুছে গিয়েছিল। এ বারও ভোটের আগে নেতাদের দল ছাড়ার হিড়িক, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, পারিবারিক কোন্দলে ছন্নছাড়া দশা ছিল দলের। জোটসঙ্গী কংগ্রেসের অবস্থাও ছিল তথৈবচ। তাদের রাজ্য নেতৃত্বে টানাপড়েন, রাহুল গাঁধীর এক রকম গা-ছাড়া প্রচার— সব মিলিয়ে এক মাস আগেও মহারাষ্ট্রে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বিরোধী শিবিরকে। কিন্তু আজ ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, শাসক শিবিরকে বড় ধাক্কা দিয়ে একশোটিরও বেশি আসন দখল করেছে কংগ্রেস-এনসিপি জোট। যার মধ্যে রাত পর্যন্ত এনসিপি ও কংগ্রেস যথাক্রমে এগিয়ে রয়েছে ৫৪টি ও ৪৫টি আসনে।
অনেকেরই মতে, এনসিপি-র চাঙ্গা হওয়ার জন্য দায়ী মুম্বই প্রশাসন। বকলমে শাসক শিবির। সেপ্টেম্বরে মহারাষ্ট্র সমবায় ব্যাঙ্ক দুর্নীতি মামলার তদন্তে উঠে আসে শরদ পওয়ারের নাম। ইডি তাঁকে ডাকতে পারে বলে জল্পনা শুরু হতেই পওয়ার জানান, তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যাবেন ইডি দফতরে। শুনেই জেলায়-জেলায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন এনসিপি কর্মীরা। শিবসেনার একাংশের অভিযোগ, তাদের দুর্বল করতে এনসিপিকে চাঙ্গা করার কৌশল নেয় বিজেপি। যা বুমেরাং হয়। কর্মীদের সক্রিয়তা দেখে বিপুল উদ্যমে প্রচারে নামেন পওয়ার। সাতারা-তে অশক্ত শরীরে বৃষ্টির মধ্যে নির্বাচনী সভায় বক্তৃতা দেন। মাথায় ছাতা ধরতে গেলে তা সরিয়ে দিয়ে পওয়ার বলেন, সমর্থকেরা ভিজছেন, তিনিও ভিজবেন। ৮০ বছরের ক্যানসারগ্রস্ত শরীর নিয়েও দুর্যোগের মুখে পওয়ারের ময়দান না-ছাড়ার সেই ছবি ভাইরাল হয় রাজ্য জুড়ে। এনসিপি নেতাদের দাবি, পওয়ারের ছবি উজ্জীবিত করে গোটা দলকে।
মজিদ মেমনের মতো এনসিপি নেতাদের আক্ষেপ, কংগ্রেসও এই ভাবে অন্তর্কলহ ভুলে একজোট হয়ে লড়াইতে নামলে হয়তো বিরোধীদের ফল আরও ভাল হত। শেষ বেলায় এনসিপি যে এত ভাল ফল করবে, তা সম্ভবত হিসেবের বাইরে ছিল বিজেপির। গত কালই বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা দাবি করেছিলেন, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস একটি হলেও আসন বেশি পাবে এনসিপি-র থেকে। আজ ফলাফল দেখে বিষর্ম সেই নেতাই বলছেন, ‘‘এনসিপি নিজে শুধু ভাল ফলই করেনি, কংগ্রেসকেও ভাল করতে সাহায্য করেছে। এনসিপি কর্মীরা একজোট হয়ে ভোট দিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থীদের। যার ফলে বিজেপির হিসেব গুলিয়ে গিয়েছে।’’