PFI

পিএফআইয়ের মতোই ‘দেশবিরোধী’ অভিযোগে আরএসএস নিষিদ্ধ হয় তিন বার! কী ঘটেছিল তখন?

শেষ পর্যন্ত সঙ্ঘ পরিবার মুচলেকা দিয়ে ভারতের জাতীয় পতাকার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করার পরে নরম হয়েছিলেন বল্লভভাই পটেল। আরএসএসের ধৃত নেতা-কর্মীরাও মুক্তি পেয়েছিলেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:২৪
Share:

পিএফআইয়ের মতোই নিষিদ্ধ হয়েছিল আরএসএস।

ইতিহাস বলছে, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নানা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে ব্রিটিশ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল তারা। স্বাধীন ভারতেও একাধিক বার আরএসএসের বিরুদ্ধে দেশবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ উঠেছে। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়েছে তিন বার। ঠিক যেমন এ বার দেশবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে কট্টরপন্থী সংগঠন ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’ (পিএফআই)-এর উপর।

Advertisement

১৯২৫ সালে কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার প্রতিষ্ঠিত হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে কংগ্রেস, মহাত্মা গান্ধীর পাশাপাশি জাতীয় পতাকাকেও আক্রমণ করেছিল। আরএসএসের মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’-এ সঙ্ঘের তৎকালীন কর্ণধার এমএস গোলওয়ালকর লিখেছিলেন, ‘হিন্দুরা কোনও দিনই তিন রঙের পতাকা মানবেন না, কারণ তাঁরা তিনকে অশুভ মনে করেন!’ তবে সে কারণে নয়, আরএসএস প্রথম বার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধী হত্যার পরে।

তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই পটেল আরএসএস-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অনেক নেতাকে কারারুদ্ধ করেছিলেন সে সময়। বস্তুত, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ‘পরামর্শ’ উপেক্ষা করেই ১৯৪৯-এর জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছিলেন বল্লভভাই। এ বিষয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের চিঠির জবাবে বল্লভভাই লিখেছেন, ‘আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই যে হিন্দু মহাসভার একটি কট্টরপন্থী অংশ ষড়যন্ত্রে (গান্ধী হত্যা) জড়িত। আরএসএস সরকার এবং দেশের অস্তিত্বের পক্ষে বিপজ্জনক।’

Advertisement

শেষ পর্যন্ত অবশ্য সঙ্ঘ পরিবার মুচলেকা দিয়ে ভারতের জাতীয় পতাকার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করার পরে নরম হয়েছিলেন বল্লভভাই। ধৃতেরাও মুক্তি পেয়েছিলেন। যদিও এখনও নিয়মিত ভাবেই সঙ্ঘের নেতা-কর্মীদের একাংশের নামে গান্ধী-ঘাতক নাথুরাম গডসের নামে জয়ধ্বনির অভিযোগ ওঠে।

স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে ১৯৭৫-’৭৭ সালে অর্থাৎ জরুরি অবস্থা-পর্বে আরএসএসের ভূমিকাকে অবশ্য ‘ইতিবাচক’ বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের স্বৈরাচারের প্রতিবাদ জানিয়ে সে সময় নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছিল আরএসএস। প্রচারক-স্বয়ংসেবক-সমর্থকেরা দলে দলে জেলে গিয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালের লোকসভা ভোটে ইন্দিরা-বিরোধীদের একজোট করে কেন্দ্রে প্রথম অকংগ্রেস সরকার গঠনের নেপথ্যে সঙ্ঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ইন্দিরার পতনের সঙ্গেই উঠে গিয়েছিল সেই নিষেধাজ্ঞা।

আরএসএসের বিরুদ্ধে তৃতীয় তথা শেষ বার নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। উন্মত্ত করসেবকদের হামলায় অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার পরে। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওয়ের সরকারের ওই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল। তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসবি চহ্বাণ আরএসএসের পাশাপাশি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল এবং কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন ‘জামাত-ই-ইসলামি হিন্দ’ ও ‘স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ (সিমি)-কেও নিষিদ্ধ করেছিলেন সে সময়।

যদিও ট্রাইব্যুনালের সামনে নিষেধাজ্ঞা জারির যুক্তিগুলি শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি। এ বারও পিএফআইয়ের ছাত্রশাখা ‘ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’ (সিএফআই) জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা জারির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করা হবে আদালতে। শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদী সরকার আদালতে পিএফআই এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে ‘দেশবিরোধী কার্যকলাপের তথ্যপ্রমাণ’ দিতে পারে কি না, প্রশ্ন এখন তা নিয়েই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement