বিশ্বের প্রায় ১৯ শতাংশ শিশু, ৪৭ কোটি ৩০ লক্ষেরও বেশি সংখ্যাটা— সংঘর্ষ এলাকায় বাস করছে। —প্রতীকী চিত্র।
প্যালেস্টাইন থেকে মায়ানমার, হেটি থেকে সুদান— দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এত বেশি সংঘর্ষ আর কোনও বছর দেখেনি, যা দেখল ২০২৪। শুক্রবার প্রকাশিত ইউনিসেফের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ব জুড়ে শিশুদের উপর সশস্ত্র সংঘাতের ধ্বংসাত্মক অভিঘাত প্রায় রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে। বিশ্বের প্রায় ১৯ শতাংশ শিশু, ৪৭ কোটি ৩০ লক্ষেরও বেশি সংখ্যাটা— সংঘর্ষ এলাকায় বাস করছে।
গাজ়ায় হাজার হাজার শিশু ইতিমধ্যেই নিহত বা আহত। ইউক্রেনে ২০২৩ সালে যত শিশু নিহত হয়েছিল, ২০২৪ ন’মাসের মধ্যেই সেই সংখ্যাটা ছাড়িয়ে গিয়েছে। পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৪ কোটি ৭২ লক্ষ শিশু এই মুহূর্তে বাস্তুচ্যুত। রেকর্ড সংখ্যক শিশুর মৌলিক অধিকার লুণ্ঠিত হচ্ছে, তারা স্কুলে যেতে পারছে না, খাবার পাচ্ছে না, ওষুধ-টিকা পাচ্ছে না। সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিতে এখন ৫ কোটি ২০ লক্ষেরও বেশি শিশু স্কুলের বাইরে বলে রিপোর্টে অনুমান করা হয়েছে৷ গাজ়া এবং সুদানের শিশুদের বড় অংশ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। ইউক্রেন, কঙ্গো এবং সিরিয়ার স্কুলগুলি হয় ধ্বংসপ্রাপ্ত, নয় ক্ষতিগ্রস্ত, নয়তো অন্য কাজে ব্যবহৃত। শিক্ষার পরিকাঠামো ধ্বংস হওয়া এবং স্কুল সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তাহীনতা শিশুদের অবস্থা ভয়াবহ করে তুলেছে। সংঘাতের এই পরিবেশে ধর্ষণ এবং যৌন হিংসার প্রকোপও খুব বেড়েছে বলে ইউনিসেফের রিপোর্টে জানানো হয়েছে। হাইতিতে যেমন এ বছর শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন হিংসার ঘটনা হাজার শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
শিশুদের পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যের উপরেও খুব বড় আঘাত নেমে এসেছে চলমান সংঘর্ষের আবহে। খাদ্য সরবরাহে বিপর্যয়, বাস্তুচ্যুতি এবং ত্রাণে বাধার কারণে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার চরমে পৌঁছেছে। বিশ্বের পাঁচটি সংঘর্ষ এলাকায় ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ খাবারের অভাবে ধুঁকছেন। সুদানের উত্তর দারফারে যেমন ২০১৭-র পর থেকে এই প্রথম আবার দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করতে হয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে সংঘর্ষ দীর্ণ অঞ্চলগুলিতে।
রিপোর্ট দেখা যাচ্ছে, এ বছরে জরুরি টিকা পায়নি, বা পুরো পায়নি এমন শিশুদের ৪০ শতাংশেরই বাস সংঘর্ষ এলাকায়। লাগাতার ধ্বংসের মধ্যে বাস করা, স্বজন হারানো শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটিও খুব বড় উদ্বেগের জায়গা নিচ্ছে। আতঙ্ক, হতাশা, বিষাদ, দুঃস্বপ্ন, ঘুমে ব্যাঘাত, আক্রমণাত্মক অথবা গুটিয়ে যাওয়া স্বভাবের কবলে পড়ে যাচ্ছে, পড়তে চলেছে অনেকেই।
ইউনিসেফের প্রশাসনিক ডিরেক্টর ক্যাথরিন রাসেল বলছেন, প্রায় সব দিক থেকেই ইউনিসেফের ইতিহাসে যুদ্ধপীড়িত শিশুদের জন্য সবচেয়ে খারাপ বছরগুলির একটি হল ২০২৪। সেটা আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যার দিক থেকেও বটে, তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের দিক থেকেও বটে। রাসেলের কথায়, ‘‘আমরা এটাকেই ক্রমশ স্বাভাবিক বলে মনে হতে দিতে পারি না। অনিয়ন্ত্রিত যুদ্ধ থেকে ক্ষতির বোঝা একটা গোটা প্রজন্মের শিশুদের মাথায় চাপুক, এটা হতে দেওয়া যায় না।’’