গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
বিজেপির প্রতিনিধিদের থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরে অনির্বাচিত পাঁচ বিধায়ককে মনোনীত করবেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর (উপরাজ্যপাল) মনোজ সিংহ। আর তা করবেন সরকার গঠনের আগেই। সোমবার এই দাবি করেছেন ওই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিজেপি নেতা সোফি ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘‘মনোনীত বিধায়কেরা বিজেপিরই হবেন। অশোক কৌল, রজনী শেঠি, সুনীল শেঠি, ফরিদা খান এবং আমাদের মহিলা মোর্চা নেত্রী সঞ্জিতা ডোগরাকে মনোনীত করা হবে। তাঁদেরই সাহায্যে আমরা সরকার গড়ব।’’
প্রসঙ্গত, জম্মু ও কাশ্মীরের ৯০ আসনে সরাসরি ভোট হয়েছে। ফলে পরিষদীয় বিধি অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠতার ‘জাদু সংখ্যা’ ৪৬ হওয়া উচিত। কিন্তু ২০১৯-এর জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন এবং ওই আইনের ২০২৩ সালের সংশোধনী অনুযায়ী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল একযোগে পাঁচ জন অনির্বাচিত বিধায়ককে বেছে নিতে পারবেন। তার মধ্যে কাশ্মীরি পণ্ডিত এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে আসা উদ্বাস্তুদের প্রতিনিধি থাকবেন।
কিন্তু ঠিক কোন সময় ওই বিধায়কদের মনোনীত করা যাবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও উল্লেখ নেই আইনে। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, নতুন সরকার গঠনের পরে মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ মেনেই উপরাজ্যপালকে বিধায়ক মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। দিল্লি হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এসএন ধিংড়া এ প্রসঙ্গে পিটিআইকে ‘‘এক জনকে প্রকৃত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করা প্রয়োজন।’’ আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণের মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নির্বাচিত বিধায়কদের উপরেই মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের অধিকার থাকা উচিত। কেন্দ্রীয় সরকারের এতে নাক গলানো উচিত নয়।’’
কংগ্রেস, ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি), পিডিপি (পিপল্স ডেমোক্র্যাটিক পার্টি)-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের আশঙ্কা, সরকার গঠনের আগেই অমিত শাহের মন্ত্রকের ‘বার্তা’ মেনে উপরাজ্যপাল মনোজ সিংহ বিজেপি ঘনিষ্ঠ পাঁচ ব্যক্তিকে বিধায়ক মনোনীত করে জনাদেশ পাল্টে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারেন। ইতিমধ্যেই ‘ইন্ডিয়া’র তরফে উপরাজ্যপালকে সরকার গড়ার আগে পাঁচ বিধায়ক মনোনীত না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। যদিও আইনজীবী অশ্বিনীকুমার দুবে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০১৮ সালে আর এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরিতে একক সিদ্ধান্ত তিন জন বিধায়ক মনোনীত করেছিলেন তৎকালীন উপরাজ্যপাল কিরণ বেদী। সুপ্রিম কোর্ট সেই সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছিল।
যদিও সাম্প্রতিক কালে দিল্লি পুরসভায় বোর্ড গঠনের উপরাজ্যপালের নিয়োগ করা অল্ডারম্যানদের ভোটাধিকার খারিজ করেছিল শীর্ষ আদালত। মেয়র নির্বাচনের আগে ১০ জন অল্ডারম্যান নিয়োগ করেছিলেন উপরাজ্যপাল ভিকে সাক্সেনা। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল আম আদমি পার্টি (আপ)। শেষ পর্যন্ত শীর্ষ আদালত জানায়, ওই অল্ডারম্যানরা মেয়র নির্বাচনের ভোটাভুটিতে অংশ নিতে পারবেন না। এই পরিস্থিতিতে জম্মু ও কাশ্মীরের নতা বিধানসভা ‘ত্রিশঙ্কু’ হলে সরকার গড়া নিয়ে বিতর্ক সুপ্রিম কোর্টে যাবে বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন।