ধন্দ নিয়েও জোট পথে দুই বাম দল

পশ্চিমবঙ্গে বামেদের বড় শরিক সিপিএম তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে যখন জোটের সুফল বোঝাচ্ছে, আর এক শরিক সিপিআই তখন তাদের জাতীয় নেতৃত্বকে বলল, কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তেমন কোনও সুবিধাই মেলেনি। জোট নিয়ে বামেদের একাংশের মধ্যে যে ধন্দ রয়েই গিয়েছে, রবিবারের ঘটনায় তা আবার স্পষ্ট হল।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০৩:৫৩
Share:

পশ্চিমবঙ্গে বামেদের বড় শরিক সিপিএম তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে যখন জোটের সুফল বোঝাচ্ছে, আর এক শরিক সিপিআই তখন তাদের জাতীয় নেতৃত্বকে বলল, কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তেমন কোনও সুবিধাই মেলেনি। জোট নিয়ে বামেদের একাংশের মধ্যে যে ধন্দ রয়েই গিয়েছে, রবিবারের ঘটনায় তা আবার স্পষ্ট হল।

Advertisement

মূলত পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য রাজ্যের ভোট ফলাফলের পর্যালোচনায় রবিবার থেকে দিল্লিতে সিপিএমের দু’দিনের পলিটব্যুরো বৈঠক শুরু হয়েছে। শুক্রবার ও শনিবার একই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সিপিআই-এর জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেও।

সিপিএমের প্রকাশ কারাট ও তাঁর অনুগামীরা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতাদের দিকে অভিযোগ তুলেছেন— কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তর লক্ষণরেখা পেরিয়ে তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে প্রকাশ্যে জোট করেছেন। একই যুক্তিতে বাংলার পাশে থাকার জন্য সীতারাম ইয়েচুরিকেও কোণঠাসা করতে চাইছে কারাট-শিবির। রাজ্য নেতৃত্ব সম্পূর্ণ নিজের সিদ্ধান্তে কংগ্রেসের সঙ্গে প্রকাশ্যে জোট বেঁধেছে বলে সরব হয়েছেন প্রকাশ কারাট। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই তোপের মুখে দাঁড়িয়েও রাজ্য নেতারা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ধরে রাখার পক্ষেই সওয়াল করেছেন। যুক্তি দিয়েছেন, গত লোকসভার তুলনায় আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে বিধানসভা ভোটে ভাল ফল করেছে জোট।

Advertisement

উল্টো দিকে সিপিআই-এর রিপোর্ট বলছে, ‘কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়ার প্রয়োজনীয়তা মানুষকে বোঝানো যায়নি। এত দিন বিপরীত মেরুতে থাকা দু’টি দল কেন জোট বাঁধছে, সে বিষয়ে বামেরা বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি দিতে পারেনি। তার ফলে বামেদের ক্ষতির বিনিময়ে কংগ্রেস তুলনায় বেশি লাভ কুড়িয়েছে।’ ফল প্রকাশের দিনই সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম সংশয় প্রকাশ করেছিলেন— কংগ্রেসের ভোট হয়তো পুরোপুরি বামেদের ঝুলিতে আসেনি। সিপিআই রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক সেই সিদ্ধান্তেই এসে পৌঁছেছেন। তাঁদের রিপোর্ট বলছে, ‘বাম সমর্থকরা যে ভাবে কংগ্রেস প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন, সেই অনুপাতে কংগ্রেস সমর্থকরা বাম প্রার্থীদের ভোট দেননি। কংগ্রেসের ভোটের একটা অংশ তৃণমূল পেয়েছে।’

আলিমুদ্দিনের নেতাদের যুক্তি, কংগ্রেসের ভোট যদি কিছুটা তৃণমূলের দিকে গিয়েও থাকে, তাতে তেমন কিছু ক্ষতি হয়নি। আজ পলিটব্যুরো বৈঠকে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র যুক্তি দিয়েছেন, ২০১৪-য় বাম ও কংগ্রেস সম্মিলিত ভাবে ৩৯.৬% ভোট পেয়েছিল। এ বার বাম, কংগ্রেস ও জোটের অন্য দলগুলির সম্মিলিত ভোটের হার ৩৯.৪%। কিন্তু লোকসভা ভোটের হিসেবে বাম ও কংগ্রেস ৫৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে ছিল। বিধানসভায় কিন্তু ৭৭টি আসনে জিতেছে জোট। এই হিসেবকে জোটের স্পষ্ট অগ্রগতি হিসেবেই তুলে ধরেছেন আলিমুদ্দিনের নেতারা। উল্টো দিকে সিপিআই নেতৃত্বের মতে, মানুষ স্থায়ী সরকার চেয়েছেন বলেই তৃণমূলের উপর ভরসা রেখেছেন। বিজেপির বেশ কিছু ভোটও তৃণমূল পেয়েছে। বাম ও কংগ্রেসের জোটের হার আদতে রাজনৈতিক হার। তার থেকেও বেশি চিন্তার কারণ— ২০০৯ থেকে বামেদের গণভিত্তিতে যে ভাঙন ধরেছিল, তা এখনও মেরামত করা যায়নি।

আবার গণভিত্তি মজবুত না করেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় ফেরার শর্টকাট পথ ধরার জন্য সিপিএমের পলিটব্যুরোয় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে আলিমুদ্দিনের নেতাদের। কিন্তু আগামী দিনেও জোটের পথে চলার পক্ষেই আজ পলিটব্যুরোয় যুক্তি সাজিয়েছেন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, ভোটের পরেও তৃণমূলের হামলা চলছে। সেই হামলা রুখতে অন্তত আগামী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ধরে রাখতে হবে।

রাজ্য সিপিআই বলছে, বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরে মানুষের সঙ্গে যে সব দুর্ব্যবহার হয়েছিল, তা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই পাঁচ বছরে ভুলে যাননি। তাই তৃণমূল সরকারকে হটানোর ইচ্ছা সত্ত্বেও তাঁরা বামেদের ভোট দেননি। ভোটের ফলাফলের প্রাথমিক পর্যালোচনা করে সিপিআই রাজ্য নেতৃত্ব দলের জাতীয় কর্মসমিতির কাছে এই রিপোর্ট দিয়েছে। যাতে সিলমোহর বসিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও।

কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে চলতে গিয়ে বাম ঐক্যে ফাটল ধরছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে সিপিআই বৈঠকে। রাজ্য সিপিআইয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, আসন সমঝোতার পিছনে মূল ভূমিকা ছিল সিপিএমের ক্ষমতায় ফেরার তাগিদ। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাওয়ার ইচ্ছা। অন্য বাম দলগুলি তেমন উৎসাহী না-হলেও বাম ঐক্য ধরে রাখার স্বার্থে তারা জোটে রাজি হয়।

সিপিএম নেতারা বলছেন, দু’টাকা কিলো চালের মতো জনপ্রিয় প্রকল্পের সুবিধা কুড়িয়েছে তৃণমূল। বামেদের পক্ষে তার বিরোধিতা করা সম্ভব হয়নি। কারণ বামেরাই খাদ্য সুরক্ষা আইনের দাবিদার ছিল। সিপিআই নেতারাও বলছেন, কিছু উন্নয়ন মূলক প্রকল্প তুলে ধরে গ্রাম-শহরের মানুষের ভোট জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement