ফাইল ছবি।
দিবস রাই কর্মসূত্রে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন গুরুগ্রামে। স্ত্রীর প্রসব বেদনা ওঠায় তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যান অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই সন্তান প্রসব করেন স্ত্রী। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর দিন থেকেই পেটে প্রবল ব্যথা অনুভব করেন স্ত্রী। আবার চিকিৎসকের কাছে ছোটেন স্বামী। পরীক্ষা করে দেখা যায়, স্ত্রীর তলপেটে রয়ে গিয়েছে তুলোর দলা!
স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় দু’বছর মামলা চলার পর গুরুগ্রামের একটি আদালত ওই বেসরকারি হাসপাতাল ও তার দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতিতে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে।
আদতে দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা দিবস রাই, বেশ কয়েক বছর ধরে গুরুগ্রামের বাসিন্দা। গুরুগ্রামের সিকন্দরপুরে স্ত্রী স্বস্তিকাকে নিয়ে থাকেন। ২০২০-এর এপ্রিলে ধরা পড়ে স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। তার আগেই লকডাউনের প্রকোপে চাকরি হারিয়েছেন দিবস, পকেটে পয়সাও নেই। সেই বছরেই নভেম্বরে প্রবল প্রসববেদনা শুরু হওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে সরকারি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যান দিবস। সেখানকার কর্মীরা স্বস্তিকাকে সেক্টর ১২-এর ওই হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। খরচের কথা না ভেবে দিবস স্বস্তিকাকে সেখানে নিয়ে যান, ভর্তি করেন। ১৬ নভেম্বর কন্যা সন্তানের জন্ম দেন স্বস্তিকা।
হাসপাতালের খরচ মেটাতে ৩০ হাজার টাকা ধার করতে হয়েছিল দিবসকে। কিন্তু স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে ফিরতেই শুরু নয়া সমস্যা। স্বস্তিকার তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা। সেই সঙ্গে দিনকে দিন কমতে থাকে ওজন। আবার ওই হাসপাতালের শরণাপন্ন হন দিবস। কিন্তু কিছুই ধরা পড়ে না। শেষ পর্যন্ত অন্য একটি হাসপাতালে পরীক্ষা করিয়ে ধরা পড়ে স্বস্তিকার পেটে রয়ে গিয়েছে অস্ত্রোপচারের তুলো! এরই মধ্যে সদ্য মা হওয়া স্বস্তিকার ১৬ কেজি ওজন কমেছে।
এখানেই শেষ নয়। দিবসের অভিযোগ, স্বস্তিকার পেটে অস্ত্রোপচারের তুলো রয়ে গিয়েছে জানতে পেরে এক দিন গোপনে অ্যাম্বুল্যান্সে করে স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে আনা হয়। কয়েকটি কাগজে সই করিয়ে এক প্রকার জোর করেই আবার অস্ত্রোপচার করে তুলো বের করে দেয় অভিযুক্ত ওই হাসপাতাল।
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে তখনই হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা করেন দিবস। সেই মামলারই রায় দিল গুরুগ্রামের একটি আদালত। বিচারক তাঁর রায়ে হাসপাতাল ও তার দুই চিকিৎসককে চিকিৎসায় গাফিলতিতে দোষী সাব্যস্ত করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন।
দিবস বলেন, ‘‘সেই সময় আমার চাকরি নেই। কী কষ্ট করে যে সব কিছু সামলেছি। স্বস্তিকাকে কোনও বড় হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনি। সরকারি অঙ্গনওয়াড়ি থেকে আমাকে শিবা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। সেখানেই আমার এমন সর্বনাশ হয়েছে। পুলিশ তো প্রথমে হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগও নিতে চায়নি। তাই বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। সুবিচার পেয়েছি। এতেই আমি খুশি।’’