আগরতলায় অমিত শাহ এবং জে পি নড্ডাকে স্বাগত জানাচ্ছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা এবং রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র।
ভোটের ফল ঘোষণার পরে প্রথম জট ছিল মুখ্যমন্ত্রীর আসন ঘিরে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বার্তা পেয়ে শেষ পর্যন্ত মানিক সাহাই দ্বিতীয় বারের জন্য ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। কিন্তু শপথ গ্রহণের আগের রাতেও মন্ত্রিসভার তালিকা চূড়ান্ত হয়নি বিজেপি শিবিরে! কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা রাত পর্যন্ত দফায় দফায় রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছেন। সূত্রের খবর, রাজভবনে নতুন মন্ত্রীদের তালিকা পাঠানো হতে পারে আজ, বুধবার সকালে।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আগরতলার বিবেকানন্দ ময়দানে আজ উপস্থিত থাকার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে দুই মুখ্যমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠান সেরে প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার রাতে উত্তর-পূর্বেই রয়েছেন। তবে পাঁচ বছর আগে ত্রিপুরায় বিজেপির প্রথম মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে যে সৌজন্যের আবহ ছিল, তা এ বার উধাও।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে গত বার বিজেপির বিপ্লব দেব সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সঙ্গে দেখা করে আশীর্বাদ নিয়েছিলেন। মানিকবাবুও শপথ অনুষ্ঠানে মোদী, লালকৃষ্ণ আডবাণীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। এ বার মানিকবাবু-সহ বিরোধী শিবিরের নেতাদের নামে মুখ্যসচিবের পাঠানো আমন্ত্রণপত্র এসেছে সরকারি পত্রবাহক মারফত। কিন্তু ভোট-পরবর্তী ‘সন্ত্রাসে’ যেখানে দলের কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত, তখন নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে হাজির থাকার কারণ দেখছেন না বিরোধী নেতৃত্ব। সন্ত্রাস দমনে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েই তাঁরা অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ত্রিপুরা বামফ্রন্টের তরফে রাতে বলা হয়েছে, ‘ভোটের ফল ঘোষণার দিন থেকে সারা ত্রিপুরার বুকে শাসক দলের দুর্বৃত্তদের মাধ্যমে যে পরিকল্পিত অভাবনীয় রাজনৈতিক সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে, তার প্রতিবাদে অত্যন্ত দুঃখ ও ক্ষোভের সঙ্গে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আমরা বয়কট করছি’। নতুন সরকারকে ‘শুভেচ্ছা’ জানিয়ে শান্তির পরিবেশ ফেরানোর জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। একই বক্তব্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিংহও। বিরোধীদের এই অবস্থানকে পাল্টা ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিচ্ছে শাসক বিজেপি।
উত্তর-পূর্বের অন্য দুই রাজ্যে শপথ অনুষ্ঠানের পরে এ দিন সন্ধ্যায় আগরতলায় এসে গিয়েছেন শাহ এবং নড্ডা। বিজেপি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি আবাসে এবং রাজ্য সরকারি অতিথিশালায় তাঁরা দফায় দফায় বৈঠকে বসেছেন। ভাবী মুখ্যমন্ত্রী মানিক, বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, ত্রিপুরায় দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মহেশ শর্মা বৈঠকে ছিলেন। সূত্রের খবর, বিভিন্ন অংশের জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব এবং দলের একাধিক শিবিরের মধ্যে ভারসাম্য রেখে মন্ত্রিসভার তালিকা তৈরির চেষ্টা চলছে। মন্ত্রিসভা বাছতে কেন এত দেরি, তা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না বিজেপি নেতারা। দলের রাজ্য সভাপতি শুধু বলেছেন, ‘‘কালকের মধ্যে(বুধবার) সব ঠিক হয়ে যাবে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর শপথের আগের দিন তিপ্রা মথার সর্বোচ্চ নেতা প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মা ফের জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা সরকারে যোগ দিচ্ছেন না। শিলং থেকে গুয়াহাটি হয়ে এ দিন আগরতলা ফিরেছেন ‘বুবাগ্রা’। একটি সূত্রের দাবি, গুয়াহাটিতে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গে তাঁর কথাও হয়েছে। তবে রাজ্যে ফিরে প্রদ্যোৎ বলেছেন, ‘‘তিপ্রাল্যান্ড সংক্রান্ত দাবির সাংবিধানিক সমাধানের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান আমরা জানতে চাই। এটা জনজাতিদের স্বার্থের প্রশ্ন। কয়েক জনের মন্ত্রিত্বের প্রশ্ন নয়!’’ শাহ-নড্ডারা বসে মথার দাবির প্রশ্নে কোনও কৌশল ঠিক করেন কি না, সে দিকেও নজর রয়েছে রাজনৈতিক শিবিরের।