রাজনাথ সিংহ। —ফাইল চিত্র
বিরোধীরা বহু বার দাবি করছেন, পূর্ব লাদাখে ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে ঢুকে বসে আছে চিনের সেনা। কিন্তু সেই অভিযোগ আবারও উড়িয়ে দিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় পরিস্থিতি শুধু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তাই নয়, ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নয়াদিল্লি-বেজিং কূটনৈতিক ও সামরিক আলোচনাও সমান্তরালভাবে চলছে বলে জানিয়েছেন রাজনাথ।
৪ মে থেকে পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় বিপুল সেনা মোতায়েন শুরু করে চিন। ভারতও সেনা ও রসদ মজুত শুরু করে। তার জেরে নয়াদিল্লি-বেজিং সম্পর্কে উত্তেজনা চরমে ওঠে। তার মধ্যেই ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় ঘটে যায় নজিরবিহীন সেনা সংঘর্ষ। সীমান্তের এই উত্তেজনার রেশে তপ্ত হয় দেশের অভ্যন্তরের রাজনীতিও। মোদী সরকার দুর্বল বলে অভিযোগ তুলে সরব হয় কংগ্রেস-সহ অধিকাংশ বিরোধী দল। চিনের সেনা পিপল্স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে বলে লাগাতার আক্রমণ শানাতে থাকেন বিরোধীরা। উত্তেজনা প্রশমনে এবং সেনা মোতায়েন সরাতে দু’পক্ষের আলোচনা শুরু হয় সামরিক ও কূটনৈতিক চ্যানেলে। সেই পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও এখনও পুরোপুরি মেটেনি। থামেনি বিরোধীদের আক্রমণও। শাসক পক্ষও বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বার বার।
একটি সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে রাজনাথ সিংহ ফের জানিয়ে দিলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পাক সেনার ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকার অভিযোগ উড়িয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সরকারের অবস্থান আগেও জানিয়েছি। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পিএলএ ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকেছে— এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ তবে ৪ মে-র আগের স্থিতাবস্থা যে ফেরেনি, রাজনাথের কথায় ধরা পড়েছে সেটাও। তিনি বলেন, ‘‘কমান্ডার পর্যায়ের আলোচনা চলছে। আমরা জানি না, সমস্যা পুরোপুরি মিটবে কখন। কিন্তু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’ তবে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থেই সব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন রাজনাথ।
বিরোধীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক কংগ্রেস। আরও স্পষ্ট করে বললে, রাহুল গাঁধী। নাম না করেও সেই কংগ্রেসকেই পাল্টা নিশানা করে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তোপ, ‘‘১৯৬২ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত কী হয়েছে, সবাই জানেন। সে নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। আমাদের সেনা এলএসি-তে শৌর্যের পরিচয় দিয়েছে। গালওয়ান সংঘর্ষের পর আমি নিজে সেনাবাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে দেখা করেছি। প্রধানমন্ত্রীও গিয়েছিলেন। আমি শুধু এটা বলতে পারি, আমাদের ভূখণ্ডে ঢোকার সাহস কেউ দেখাতে পারবে না।’’
আরও পড়ুন: অরুণাচল সীমান্ত পর্যন্ত রেল প্রকল্প ঘোষণা চিনের, নজর রাখছে দিল্লি
আরও পড়ুন: ভারত মহাসাগরে এ বার টহল দেবে জার্মানির যুদ্ধজাহাজ
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট-বালটিস্তানকে অস্থায়ী রাজ্যের মর্যাদা (প্রভিশনাল প্রভিন্সিয়াল স্টেটাস) দিয়েছে পাকিস্তান। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, উপত্যকায় ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখকে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণার বদলা নিয়েছে পাকিস্তান। এই নিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে নিশানা করে রাজনাথের তোপ, ‘‘গিলগিট-বালটিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের অংশ। তার কোনও অবস্থার পরিবর্তন আমরা মেনে নেব না। ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পর হতাশ পাকিস্তান। ছন্নছাড়া ও নিরুৎসাহ হয়ে পড়েছে পাক জঙ্গি সংগঠনগুলি।"