কাজাখস্তানের দাউলেত নিয়াজবেকোভকে হারিয়ে ২০২০-র টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জিতে নিয়েছেন ভারতীয় কুস্তিগির বজরং পুনিয়া।
দেশ যখন বজরংয়ের এই পদক জয় নিয়ে উচ্ছ্বসিত, হরিয়ানার ছেলে কিন্তু তখন তাঁর কৃতিত্বের জন্য স্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। হরিয়ানার আখড়া থেকে অলিম্পিক্সের রিং পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে পাশে থাকার জন্য স্ত্রীর অবদান রয়েছে জানিয়ে টুইটও করেছেন তিনি।
জানেন কি বজরংয়ের স্ত্রী আসলে কে? হরিয়ানার বিখ্যাত ফোগাট পরিবারের জামাই বজরং। এই অতিমারির মধ্যেই কুস্তিগির মহাবীর সিংহ ফোগাটের মেয়ে সঙ্গীতা ফোগাটকে বিয়ে করেছেন।
কুস্তিগির গীতা, ববিতা, ঋতু ফোগাটের বোন সঙ্গীতা। আমির খানের ‘দঙ্গল’ ছবির সৌজন্যে গীতা-ববিতাকে সকলেই চিনে গিয়েছেন। হরিয়ানার সেই ফোগাট পরিবারের ছোট মেয়ে সঙ্গীতা নিজেও এক জন কুস্তিগির।
কুস্তির আখড়াতেই একে অপরের প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করেছিলেন দু’জনে। ২০২০ সালে সঙ্গীতার সঙ্গে বিয়ে হয় বজরংয়ের।
হরিয়ানার স্থানীয় এক আখড়ায় বাবাকে কুস্তির অনুশীলন করতে দেখতেন বজরং। সেই দেখেই কুস্তির প্রতি ভালবাসা তৈরি হয় তাঁর। ২০১৫ সাল অবধি স্থানীয় আখড়াতেই অনুশীলন করতেন তিনি।
ছ’বছর আগে তাঁর পরিবার সোনেপতে চলে আসেন। সাইতে (স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া) ভর্তি করা হয় বজরংকে।
সেখানেই কুস্তির অনুশীলন করার সময় সঙ্গীতার সঙ্গে পরিচয়। প্রথম দেখাতেই ভাল লেগেছিল সঙ্গীতাকে। সঙ্গীতার মনে যদিও তখন বজরংয়ের জন্য তেমন কোনও অনুভূতি তৈরি হয়নি।
কী ভাবে সঙ্গীতার সঙ্গে কথা শুরু করবেন প্রথমে সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলেন না বজরং। এক দিন মৌখিক পরিচয়টা সেরেই ফেললেন। নিজের ফোন নম্বর সঙ্গীতাকে দিয়ে দেন। তার পরের দিনগুলি কেটেছিল ফোন আসার অপেক্ষায়।
না, সঙ্গীতা ফোন করেননি। পরে জানান, বজরংকে ফোন করার কথা তাঁর মাথাতেই আসেনি।
এর পর যে দিন ফের সঙ্গীতার মুখোমুখি হন, সে দিন বজরং সাহস করে ফোন না করার কারণই জিজ্ঞেস করে বসেন। সঙ্গীতার উত্তরে কষ্ট পেয়েছিলেন। কিন্তু এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না তিনি।
সঙ্গীতা তাঁকে মুখের উপর জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন, নম্বর মনে ছিল না। আর যাতে ভুল না হয় তাই সে দিনই পাশে বসিয়ে নম্বর মুখস্থ করিয়েছিলেন সঙ্গীতাকে। সে দিন থেকেই টুকটাক কথা শুরু হয় দু’জনের মধ্যে।
মনে মনে একে-অপরকে ভালবেসেও ফেলেছিলেন। কিন্তু কেউই কাউকে মনের কথা জানাতে সাহস পারছিলেন না। বজরং শুধু জানিয়েছিলেন তিনি এক জনকে ভালবাসেন। কিন্তু তাঁর পরিচয় কোনও ভাবেই বলতে পারছিলেন না।
এর পর সঙ্গীতাই বাধ্য হয়ে মাঠে নামেন। সেই মেয়েটি আসলে কে তা জানার জন্য নানা সময়ে নানা ভাবে বজরংকে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। কখনও অন্য মেয়েদের ছবি দেখিয়ে, কখনও তাঁদের পরিচিত আখড়ার বিভিন্ন কুস্তিগিরদের নাম অনুমান করে বুঝে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সব চেষ্টাই বৃথা হয়েছিল।
এক দিন একটি ছোট হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় বজরং নিজেই তাঁকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে দেন। খুশিতে যেন বাক্যহারা হয়ে গিয়েছিলেন সঙ্গীতা।
২০২০ সালে খুব ছোট একটি অনুষ্ঠানে বিয়ে করেন তাঁরা। হরিয়ানার জনপ্রিয় ফোগাট পরিবারের ছোট জামাই হন বজরং। এর পর বহু বারই জানিয়েছেন, সঙ্গীতাকে স্ত্রী হিসাবে পেয়ে গর্বিত তিনি।
অলিম্পিক্সে দেশকে গর্বিত করার পর স্ত্রীকে পাশে নিয়ে একটি ছবি টুইট করে ফের সে কথা জানান বজরং। স্বামীর জন্য গর্বপ্রকাশ করেছেন সঙ্গীতাও।