স্কুল পাশ করেন কোনও মতে। কলেজের গণ্ডি আর পার করা হয়নি। মুম্বইয়ের একটি দোকানে কাজ করা সেই ছেলেকে এখন একনামে চেনে বিশ্ব। ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর ব্যবসা। বর্তমানে তিনি ভারতের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি।
তিনি গৌতম আদানি। আমদাবাদের আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। গৌতম আদানির ব্যবসায়িক সাফল্যের পিছনে রহস্য কী? কী ভাবে জিরো থেকে হিরো হয়ে উঠলেন তিনি?
আমদাবাদে বাবার কাপড়ের ব্যবসা ছিল। তবে সেই ব্যবসায় কোনও ঝোঁক ছিল না তাঁর। পড়াশোনাতেও মন বসত না বিশেষ। গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হলেও পাশ করেননি। মাঝ পথেই কলেজ ছেড়ে মুম্বইয়ে চলে আসেন।
২-৩ বছর মুম্বইয়ে একটা হিরের দোকানে কাজ করেন। তারপর ১৯৮১ সালে দাদার প্লাস্টিক কারখানার দায়িত্ব পান। সেখান থেকেই গৌতম আদানি থেকে আদানি গ্রুপের মালিক হয়ে ওঠার জার্নি শুরু তাঁর।
১৯৮৫ সালে ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য প্রাইমারি পলিমার আমদানি করতে শুরু করেন। ১৯৮৮ সালে আদানি এক্সপোর্ট লিমিটেড গড়ে ওঠে। যা বর্তমানে আদানি এন্টারপ্রাইজ নামে পরিচিত। ক্রমে আরও ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করে তাঁর ব্যবসা।
বর্তমানে তাঁর সবচেয়ে বড় প্রোজেক্ট অস্ট্রেলিয়া কোল মাইন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২১ সালেই চালু হয়ে যাবে এই কয়লা খনি। যা এখনও পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় কয়লা খনি।
গৌতমের সফল ব্যবসার মন্ত্র কী জানেন? এক বিদেশি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় আদানি জানিয়েছিলেন, “একটা ব্যবসা থেকে কম পরিমাণ আয় করুন, তারপর তার বিনিময়ে মোটা টাকা ঋণ নিন, সেই টাকা অন্য একটি ব্যবসায় লগ্নি করুন।”
এই মন্ত্রে ভর করেই আদানি হয়ে উঠেছেন বিলিয়নেয়র। ২০১৮ সালে ফোর্বসের তথ্য অনুসারে, ৮৭০ কোটি মার্কিন ডলার সম্পত্তির মালিক গৌতম আদানি। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।
বিলিয়নেয়র আদানি কিন্তু একাধিকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। ২০০৮ সালে, ২৬ নভেম্বর। মুম্বইয়ের আইকনিক তাজ হোটেলে যখন সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়, আদানি সে সময় ওই হোটেলেই ছিলেন। নৈশভোজে ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
প্রাণে বাঁচতে হোটেলের বেসমেন্ট-এ লুকিয়ে ছিলেন। চোখের সামনে খুন হতে দেখেছেন একাধিক মানুষকে। এই হামলায় শতাধিক মানুষ মারা যান। ভারতীয় কম্যান্ডোরা পরে বেসমেন্ট থেকে আদানিকে উদ্ধার করেছিলেন। উদ্ধারের পর এক সাংবাদমাধ্যমকে আদানি বলেছিলেন, ‘মাত্র ১৫ ফুট দূরে আমি মৃত্যুকে দেখেছি।’
তারও আগে ১৯৯৭ সালে আরও একবার ভয়ানক অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর। আর্থিক সাফল্য অনেকেরই হিংসার কারণ হয়ে ওঠে। কিছু লোক এর সুবিধাও নেন। অপহরণ হন তিনি। মুক্তিপণ হিসাবে প্রায় ১৫ কোটি টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। এই ঘটনায় পরে ৮ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
উচ্চ শিক্ষিত না হওয়া ব্যবসায়িক সাফল্যে কোনও দিনই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি গৌতমের। বাধা হয়েছিল বিয়েতে। উচ্চ শিক্ষিত ডেন্টিস্ট মেয়েকে স্কুল পাশ ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হননি শ্বশুরমশাই। শোনা যায়, পরে নাকি এক জ্যোতিষীর কথায় মেয়ে প্রীতির সঙ্গে গৌতম আদানির বিয়ে দেন। জ্যোতিষীর কথা সত্য প্রমাণিত হয়েছে বটে।
২০১৩ সালে গৌতম আদানির বড় ছেলে কর্ণ বিয়ে করেন। সেই বিয়েটা এখনও ভারতের হেভিওয়েট বিয়েগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা অনুষ্ঠান।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত গৌতম আদানি। নরেন্দ্র মোদীর বেশিরভাগ বিদেশ সফরে আদানিও সঙ্গে থেকেছেন, বারবার এমন অভিযোগ এনেছে বিরোধীরা।