ছবি পিটিআই।
পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ, নয়া কৃষি আইন, মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয় নিয়ে উত্তাল সংসদের দুই কক্ষ। লোকসভায় বিবৃতির কাগজ ছিঁড়ে স্পিকারের দিকে ছুড়ে দেওয়ার অভিযোগে দশ জন বিরোধী সাংসদকে (বেশির ভাগই কংগ্রেসের) সাসপেন্ড করা হয়েছে। হইচই রাজ্যসভাতেও। এই পরিস্থিতিতে দুই কক্ষেই বিজেপি-বিরোধী নানা দলের সদস্যদের কণ্ঠে শোনা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্লোগান— ‘খেলা হবে’। সংসদের এই উত্তেজনার মধ্যেই নিকটবর্তী মহাদেব রোডে দলের রাজ্যসভার সদস্য সুখেন্দুশেখর রায়ের বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় পেগাসাস-কাণ্ড নিয়ে মোদী সরকারকে তুলোধোনা করলেন তৃণমূল নেত্রী।
মমতার কথায়, “এই সরকার মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। আইনের তোয়াক্কা করছে না। অভিষেক (বন্দ্যোপাধ্যায়) বা প্রশান্ত কিশোরের ফোন হ্যাক করার অর্থ তাঁদের সঙ্গে আমার সমস্ত কথোপকথন জেনে নেওয়া।
এই পেগাসাস আসলে এক ভয়ঙ্কর ভাইরাস! এটা আমাদের, আপনাদের সবার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা শেষ করে দিতে পারে। আমার সুপ্রিম কোর্টের উপর আস্থা রয়েছে। তাঁদের কর্মরত বিচারপতিরা মিলে তদন্ত করুন, সত্যিটা সামনে আসুক। আমরা সংসদে বিষয়টি তুলছি, কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাতও করছে না!”
যে দশ জন সাংসদকে আজ পেগাসাস নিয়ে প্রতিবাদের জেরে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গুরজিৎ সিংহ অজলা, টি এন প্রতাপন, মনিকাম ঠাকুর, রবনীত সিংহ বিট্টু, হিবি ইডেন, জোথিমানি প্রমুখ। এরই মধ্যে রাজ্যসভার অধিবেশনের সম্প্রচার নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের সদস্য ডেরেক ও’ব্রায়েন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী অমিত শাহের ‘মাস্টারস্ট্রোক’ আখ্যা দিয়ে টুইটারে তিনি লেখেন, “সংসদের উচ্চকক্ষে ১৫টি বিরোধী দলের প্রায় ১০০ জন সাংসদদের বক্তব্য কাটছাঁট করে সম্প্রচার করা হচ্ছে রাজ্যসভা টিভিতে!”
আজ ফোনে আড়ি পাতা, নয়া কৃষি আইন, মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি নিয়ে বিরোধীদের আলোচনার দাবিতে দফায় দফায় অচল হয় সংসদের দুই কক্ষ। রাজ্যসভায় বিরোধীদের চিৎকার-চেঁচামেচির বিরোধিতা করে ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহ বলেন, “মাস্ক না-পরে এটা কী ধরনের আচরণ আপনাদের? অন্তত কোভিডবিধি মেনে চলুন!” মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, “কংগ্রেস এবং তৃণমূল সদস্যরা সংসদের কাজে বাধা দিচ্ছেন। তাঁরা প্রতিবাদ করতেই পারেন, কিন্তু তারও একটা সীমা রয়েছে। তাঁরা স্পিকার, মন্ত্রীদের দিকে কাগজ ছুড়ে দিচ্ছেন। আলোচনা না-করে বিরোধীরা পালাচ্ছেন কেন?” রাজ্যসভার অধিবেশন চলাকালীন উত্তেজনায় অজ্ঞান হয়ে যান তৃণমূল সদস্য শান্তা ছেত্রী। তাঁকে রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বাড়ি ফিরেছেন তিনি।
অন্য দিকে ডিএমকে এমনকি কংগ্রেসেরও কিছু সাংসদকে দেখা যায়, ‘খেলা হবে’ স্লোগান দিতে। লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “পেগাসাস নিয়ে আমরা গোড়া থেকে বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছি। আজ আমাদের স্লোগানই বিরোধীরা ব্যবহার করছেন। সংসদে এই বিষয়ে একটা সময় নির্ধারিত করে আলোচনা হোক। প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাতে অংশ নিন। তা না-করে জোর করে বিল পাশ করাচ্ছে কেন্দ্র। আমরা এর প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।”