কফিনবন্দি নিহত ভারতীয় শ্রমিকদের দেহ। ছবি: সংগৃহীত।
কেরলের বাসিন্দা এক পরিযায়ী শ্রমিকের জীবন সংগ্রামের কাহিনি অবলম্বন করে তৈরি হয়েছিল মালয়ালম সিনেমা ‘আদুজীবিতম’। ভারতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ব্যবসা করা সেই সিনেমার সহ প্রযোজক ছিলেন কেরলের শিল্পপতি কেজি আব্রাহাম। সেই আব্রাহাম ফের সংবাদ শিরোনামে। কারণ তাঁর সংস্থা এনবিটিসি-তেই কর্মরত ছিলেন কুয়েতের অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারানো ভারতীয়দের বড় একটি অংশ।
আব্রাহাম এনবিটিসি গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। এই সংস্থার দফতর রয়েছে কুয়েত ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, সৌদি আরবে। মূলত প্রযুক্তি, কারিগরি এবং আবাসন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এই সংস্থা। কুয়েতের বহুতল আবাসনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের নিহত ৪৫ জন ভারতীয়ের মধ্যে ২৪ জনই আব্রাহামের সংস্থায় কাজ করতেন।
বুধবার ভোরে কুয়েতের রাজধানী শহরের দক্ষিণে মাঙ্গাফ এলাকার একটি বহুতল আবাসনে আগুন লাগে। জানা যায়, ওই আবাসনে মূলত থাকেন শ্রমিকেরা, যাঁদের অধিকাংশই ভারতীয়। প্রথমে জানা গিয়েছিল, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয় ৪৯। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় প্রায় ৫০ জনকে। তবে কী কারণে আগুন লাগল, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। কুয়েতের কিছু স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, গ্যাস লিক হওয়ার কারণেই এই বিপর্যয়। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকেই এই অগ্নিকাণ্ড। কুয়েত প্রশাসন সূত্রে খবর, আবাসনটির একতলায় প্রায় দু’ডজন গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করা ছিল। শ্রমিকদের ঘরগুলির মাঝে ছিল কার্ডবোর্ড। দাহ্যবস্তু থাকার ফলেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে ফলে বলে মনে করা হচ্ছে।
কুয়েতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, ওই বহুতলটিও আব্রাহামের সংস্থার তৈরি। সেখানে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। আব্রাহামের জন্ম কেরলের পথানমতিতা জেলায়। ৬৯ বছর বয়সি এই শিল্পপতি হাতে গোনা ভারতীয় শিল্পপতিদের মধ্যে এক জন, যিনি পশ্চিম এশিয়ায় বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে, কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া আব্রাহাম ১৯৭৬ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে কুয়েতে চলে যান। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকা আব্রাহাম একটি আবাসন নির্মাণ সংস্থার কর্মী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। আব্রাহামের সংস্থায় বর্তমানে ১৫ হাজার কর্মী কাজ করেন। এনবিটিসি ছাড়াও কেজি গ্রুপ নামে আরও একটি সংস্থার মালিক আব্রাহাম।
কুয়েতের বহুতলে নিহত ভারতীয় শ্রমিকদের মধ্যে অধিকাংশই কেরল এবং দক্ষিণ ভারতের অন্য রাজ্যগুলির বাসিন্দা। শুক্রবার দুপুরে বায়ুসেনার বিমানে ৪৫ জন ভারতীয়ের দেহ কেরলের কোচি বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। বিমানে ছিলেন কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিংহও।