Kerala

বিমান সফর ছেঁটে শুদ্ধকরণ অভিযানে কেরলের সিপিএমও

পরপর দু’বার কেরলে সরকারে থাকার সময়ে নেতা-কর্মীদের জীবনযাপন ও আর্থিক অনিয়ম সংক্রান্ত নানা অভিযোগে বিদ্ধ হতে হচ্ছে সিপিএমকে।

Advertisement

 সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:০৬
Share:

কেরলে শুদ্ধকরণ অভিযানে হাত দিচ্ছে ক্ষমতাসীন সিপি‌এম। প্রতীকী ছবি।

বাংলায় প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল অনিল বিশ্বাসের জমানায়। তার পরে জল গড়িয়েছে আরও বহু দূর। এ বার দক্ষিণের কেরলেও শুদ্ধকরণ অভিযানে হাত দিচ্ছে ক্ষমতাসীন সিপি‌এম।

Advertisement

দলীয় সূত্রের খবর, পরপর দু’বার কেরলে সরকারে থাকার সময়ে নেতা-কর্মীদের জীবনযাপন ও আর্থিক অনিয়ম সংক্রান্ত নানা অভিযোগে বিদ্ধ হতে হচ্ছে সিপিএমকে। সেই কারণেই এ বার শুদ্ধকরণ অভিযান কড়া হাতে চালু করতে চাইছে পিনারাই বিজয়নের দল। সিপিএমের কেরল রাজ্য কমিটি শুদ্ধকরণের যে নতুন দলিল তৈরি করেছে, সেখানে নেতা-কর্মীদের সাধারণ জীবনযাপনের উপরেই সব চেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। বাংলায় ক্ষমতায় থাকাকালীন দলের নেতাদের আচার-আচরণের কেমন প্রভাব জনমানসে পড়েছিল এবং শুদ্ধকরণ চালিয়েও সবটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ফল কী হয়েছে, সেই প্রসঙ্গও উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেছে কেরলের সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এই দলিল অনুমোদিতও হয়েছে।

নতুন শুদ্ধকরণের ফরমান মেনে কেরল সিপিএমের তুলনায় নীচের তলার কমিটির নেতা-কর্মীরা আর বিমানে সফর করতে পারবেন না। যাতায়াত করতে হবে ট্রেনে, কোথাও প্রয়োজন হলে বাসে। এই নতুন নিয়মের প্রথম রেশ পড়চে চলেছে বেঙ্গালুরুতে আগামী ১৮ থেকে ২২ জনুয়ারি সিটুর সর্বভারতীয় সম্মেলনে। ওই সম্মেলনে রাজ্যের প্রতিনিধিদের দলের তরফে বলা হয়েছে, কেরলের যে কোনও বড় শহর থেকেই বেঙ্গালুরু যাওয়ার প্রচুর ট্রেন রয়েছে। তাঁদের ট্রেনেই যেতে হবে। কেরল থেকে দিল্লি যেতে হলে অনেকটা পথ সফর ককতে হয়, সময়ও লাগে। কিন্তু সাদাসিধে জীবনের সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার লক্ষ্যে শুদ্ধকরণের নির্দেশিকা বলছে, এসএফআই, ডিওয়াইএফআই বা অন্য কোনও গণ-সংগঠনের কর্মসূচিতে দিল্লি গেলেও রেলপথ বাছতে হবে।

Advertisement

বিমান-যাত্রা এড়িয়ে যাওয়ার তালিকায় পড়ছেন দলের বিধায়কেরাও। ছাড় থাকছে পলিটবুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটির মতো উচ্চতর কমিটির সদস্য এবং সাংসদদের জন্য। উচ্চ কমিটির সদস্যদের ক্ষেত্রে দলই যাতায়াতের ব্যবস্থা করে। আর সাংসদেরা উড়ানের কুপন পান সংসদ থেকে। বাংলায় অবশ্য সূর্যকান্ত মিশ্র রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরে নিয়ম চালু করেছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে এ রাজ্যের সদস্যেরা একসঙ্গে ট্রেনে যাবেন দিল্লি। এখনও সেই নিয়মই চালু। এতে খরচ কিছুটা কমে, দল বেঁধে অনেকটা সময় কাটানোও হয়। পলিটবুরোর বৈঠক থাকে আগে, তার সদস্যেরা সচরাচর বিমানেই যান। কেরল সিপিএমের ব্যাখ্যা, নিচের তলার নেতাদের উড়ানে যাওয়ার খরচ তোলার জন্য অনেক সময় প্রযোজক জুটিয়ে নেওয়া হয়, আবার গণ-সংগ্রহের তহবিলও সেই কাজে ব্যবহার করা হয়। এই প্রবণতা তারা বন্ধ করতে চায়।

নিজেদের এবং পরিবারের লোকজনের আয়-ব্যয়ের হিসেবও দলের নেতাদের নিয়মিত দিতে হবে। শুদ্ধকরণের সূত্র কতটা কার্যকর হল, বিভিন্ন কমিটিকে সময়ে সময়ে তার খতিয়ানও জমা ককতে হবে। বাংলায় প্রোমোটার-রাজের সঙ্গে দলের এক শ্রেণির নেতা-কর্মীর সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসতে শুরু করার পরে অনিল শুদ্ধকরণের নির্দেশিকা তৈরি করেছিলেন। পরে আরও বিশদে শুদ্ধকরণের দলিল তৈরি করে অভিযান হয়েছিল। তবে তার সব কিছু যে বাস্তবে কার্যকর হয়নি, পরবর্তী কালে সিপিএমই তা দলীয় দস্তাবেজে স্বীকার করেছে।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘কেরলে দল এখন ক্ষমতায়। নানা রকম বিচ্যুতির অভিযোগ আসে ক্ষমতায় থাকলে। তবে শুদ্ধকরণ একটা নিরন্তর প্রক্রিয়া। শুধু নিয়মতান্ত্রিক না হয়ে পড়ে সর্ব স্তরে আন্তরিক ভাবে কাজটা হওয়া দরকার।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement