মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কপিল সিব্বল এবং অখিলেশ যাদব।
অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি (সপা) নয়, কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা কপিল সিব্বল রাজ্যসভা আসনে সমর্থন চাইতে প্রথম শরণাপন্ন হয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সিব্বলের আর্জি জানানো হয়েছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। কিন্তু উভয়েই জানিয়েছিলেন, সিব্বলকে সরাসরি তৃণমূলে যোগ দিতে হবে। কিন্তু সিব্বল প্রথম থেকেই তা চাননি। তিনি চেয়েছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ পদে তৃণমূলের সমর্থন। ফলে ওই আলোচনা আর এগোয়নি। সপা সূত্রের খবর, তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা আর না-এগনোর ফলে সিব্বল সরাসরি অখিলেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। উত্তরপ্রদেশে গত বিধানসভা ভোটে তুলনায় বেশি আসন জেতায় সপা-র রাজ্যসভার ভোটে একটি ভূমিকা রয়েছে। তারা মনস্থ করে, সিব্বলকে তারা সমর্থন দেবে। সে জন্য প্রবীণ কংগ্রেস নেতাকে সপা-য় যোগ দিতে হবে না। সেই মতোই বুধবার সপা-র সমর্থনে, অখিলেশের উপস্থিতিতে সিব্বল রাজ্যসভায় মনোনয়ন দাখিল করেন।
প্রসঙ্গত, তৃণমূলের সঙ্গে সিব্বলের আলোচনা শুরু হয়েছিল কয়েক মাস আগে। মমতার দলের এক রাজ্যসভা সাংসদকে সিব্বল জানিয়েছিলেন, রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ হিসেবে তাঁর মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু তিনি আর কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়াতে চান না। তৃণমূল কি তাঁকে সমর্থন করবে? দলীয় সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে তৃণমূলের তাতে আপত্তিও ছিল না। কারণ, দলের নেতারা ভেবেছিলেন, সিব্বল তৃণমূলে যোগ দিয়ে তাদের টিকিটে রাজ্যসভায় প্রার্থী হবেন। কিন্তু সিব্বল জানিয়ে দেন, তিনি সরাসরি দলে যোগ দিতে উৎসাহী নন। তিনি তৃণমূলের সমর্থনে নির্দল হয়ে মনোনয়ন দিতে চান। তৃণমূল সূত্রের খবর, তাতে অনুমোদন দেননি মমতা-অভিষেক। দু’জনেই জানিয়ে দেন, সিব্বলকে তৃণমূলে সরাসরি যোগ দিতে হবে।
সরাসরি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলে কংগ্রেসকে ‘বড় ধাক্কা’ দেওয়া যেত বলে মনে করেছিলেন তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব। কিন্তু ‘নির্দল’ সিব্বলকে সমর্থন করলে সেই অভিঘাত হত না।এমনিতে সিব্বলের সঙ্গে প্রবীণ আইনজীবী হিসেবে মমতার সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। সিব্বল রাজ্য সরকারের হয়ে বহু মামলাও লড়েছেন। যেমন মামলা লড়েছেন তৃণমূলের হয়েও। সেই সূত্রেই সিব্বল ভেবেছিলেন, মমতা রাজ্যসভায় তাঁকে সমর্থন করতে রাজি হয়ে যাবেন। কিন্তু মমতা তেমন করেননি। বস্তুত, মমতার সাম্প্রতিক দিল্লি সফরেও সিব্বলের সঙ্গে তাঁর এক দফা কথা হয়েছিল বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি। ওই সূত্র জানাচ্ছে, মমতা তখনও সিব্বলকে বলেচিলেন, তিনি যেন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু প্রবীণ আইনজীবী সবিনয়ে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। তার পরেই তিনি যোগাযোগ করেন সপা প্রধান অখিলেশের সঙ্গে। অখিলেশ সিব্বলের প্রস্তাব মেনে নেন। তিনি বর্ষীয়ান কংগ্রেসি নেতাকে সপা-য় যোগ দিতে বলেননি। সেই মতোই বুধবার অখিলেশের সঙ্গে গিয়েই সিব্বল ‘নির্দল’ হিসেবে রাজ্যসভার সাসংদের পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তার পরে বলেছেন, ‘‘আমি একটি স্বাধীন কণ্ঠ হয়ে কাজ করতে চাই।’’