ভেঙে দেওয়া হয়েছে বিকাশ দুবের কানপুরের বাড়ি। পিটিআই
সংঘর্ষের পরে কেটে গিয়েছে ৫০ ঘণ্টা। এখনও বেপাত্তা আট পুলিশকর্মী খুনে অভিযুক্ত গ্যাংস্টার বিকাশ দুবে। তবে আজ কিছুটা সাফল্য পেল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। আজ ভোরে কল্যাণপুর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে আহত হয় বিকাশের প্রধান শাগরেদ দয়াশঙ্কর অগ্নিহোত্রী ওরফে কাল্লু। তার পায়ে গুলি লেগেছে। আহত অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। অগ্নিহোত্রীর থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি দেশি পিস্তল এবং দু’টি কার্তুজ। অগ্নিহোত্রীকে লালা লাজপত রাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজই এক সাব ডিভিশনাল অফিসার এবং বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্মীকেও হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
গত কালই বিকাশকে সাহায্যের আঙুল উঠেছিল চৌবেপুর থানার স্টেশন অফিসার বিনয় তিওয়ারির দিকে। তাকে সাসপেন্ডও করা হয়। ভূত যে সর্ষের মধ্যেই ছিল— আজ অগ্নিহোত্রীর বয়ানেও তা উঠে এসেছে। জেরায় ওই দুষ্কৃতী জানিয়েছে, অভিযানে বেরোনোর আগেই থানা থেকে ফোন করে সতর্ক করা হয় বিকাশকে। তার পরেই ২৫-৩০ জনকে জড়ো করে হামলার পরিকল্পনা করে বিকাশ। তবে এনকাউন্টারের সময়ে ঘরবন্দি থাকায় সে কিছুই দেখেনি বলে দাবি অগ্নিহোত্রীর। বিকাশের এই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর উপরেও ২৫ হাজার টাকার আর্থিক পুরস্কার ছিল।
খোদ পুলিশেরই একাংশ দুষ্কৃতীদের সাহায্য করায় উদ্বেগ বেড়েছে প্রশাসনের অন্দরমহলে। কানপুরের পুলিশ প্রধান মোহিত আগরওয়াল জানিয়েছেন, স্থানীয় থানার সমস্ত কর্মীই তদন্তের আওতায় রয়েছেন। অভিযানের আগাম খবর ফাঁসের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের হবে।
বিকাশের ফোন থেকেও উঠে আসছে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব। উদ্ধার হওয়া বিকাশের ফোনে ২০ জন পুলিশ অফিসারের নাম পাওয়া গিয়েছে। অন্তত দু’জন পুলিশকর্মীর সঙ্গে বিকাশের সর্বক্ষণ যোগাযোগ থাকত বলেও তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। তার মধ্যে এক জন চৌবেপুর থানারই কর্মী।
আরও পড়ুন: নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে ৪ মাওবাদীর মৃত্যু
বিকাশের সন্ধানে গত ৪৮ ঘণ্টায় শতাধিক অঞ্চলে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। ২৫টি দলও গঠন করা হয়েছে। ঔরৈয়া জেলায় শেষ বার বিকাশের অবস্থান চিহ্নিত করেছে পুলিশ। অমিত দুবের নামে নথিভুক্ত দু’টি গাড়িও উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ নিশ্চিত, ওই গাড়িতে চেপেই পালিয়েছে বিকাশ। সন্দেহ করা হচ্ছে, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান কিংবা সীমান্ত পেরিয়ে নেপালে গা ঢাকা দিয়েছে ওই গ্যাংস্টার। দুই রাজ্যের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ভারত-নেপাল সীমান্তের চেকপোস্টেও ‘ওয়ান্টেড’ পোস্টার দেওয়া হয়েছে। গত কাল ঘোষণা করা হয়েছিল, বিকাশ ও তার দলবলের সন্ধান দিতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। আজ সেই অঙ্ক বাড়িয়ে এক লক্ষ টাকা করা হয়েছে। যিনি খবর দেবেন, তাঁর পরিচয় গোপন রাখারও আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন ডিজিটাল ভিডিয়ো রেকর্ডারটি নিয়ে চম্পট দিয়েছিল বিকাশ। তথ্য লোপাটের জন্য সমস্ত ক্যামেরাও নষ্ট করে সে। ছত্রপাল সিংহ নামে এক বিদ্যুৎকর্মী জানিয়েছেন, ঘটনার দিন (৩ জুলাই) চৌবেপুর থানা থেকে শিবলির সাব স্টেশনে ফোন করে বলা হয়, বিদ্যুতের তারে সমস্যা রয়েছে, অবিলম্বে যেন বিকরু গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়। যদিও কে সেই নির্দেশ দিয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।