ছবি: পিটিআই।
এক জনপদ থেকে অন্যটার দিকে হাঁটছেন তিনি। সঙ্গে পা মেলাচ্ছে হাজার হাজার জনতা। সামাজিক মাধ্যমে যত ভিডিয়ো ফুটেজ মাথা তুলেছে, তার সবেতেই শুধু গিজগিজ করছে মাথা!
বিধানসভা ভোটের আগে বিহার চষে ফেলে হইহই ফেলে দিয়েছেন কানহাইয়া কুমার। পোশাকি নাম, ‘জন-গণ-মন যাত্রা’। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে ‘কানহাইয়া শো’! কমিউনিস্ট বা বামপন্থী কোনও নেতার ডাকে এত মানুষের ভিড় এ দেশ শেষ কবে দেখেছে, চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। এই আগ্রহের তুঙ্গে বসেই আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি পটনার গাঁধী ময়দানে ‘ঐতিহাসিক’ জমায়েত করতে চাইছেন সিপিআইয়ের তরুণ তুর্কি।
শুরু হয়েছিল চম্পারনের বাপুধাম থেকে। পুলিশ তাঁকে আটক করেছে, জনতার চাপে আবার ছেড়েও দিয়েছে। যাত্রা-পথে ইট-পাথর নিয়ে হামলা হয়েছে অন্তত তিন বার। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে চিঠি দিয়েছেন সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা। তবে কোনও কারণেই যাত্রা থামেনি। কানহাইয়ার দাবি, ‘‘বিহারের ৩৮টা জেলার অধিকাংশ মানুষ এই যাত্রাকে সমর্থন করছেন। অল্প কিছু মানুষ বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের আমরা পাল্টা যুক্তি দিয়েছি। পটনার গাঁধী ময়দানে ‘দেশ বাঁচাও, নাগরিকতা বাঁচাও’ সমাবেশ ঐতিহাসিক হবে বলেই মনে হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: ‘হাউডি মোদি’, ‘নমস্তে ট্রাম্প’ এক নয়, তেতো গিলতে হবে না তো ভারতকে?
সিএএ, এনপিআর, এনআরসি-বিরোধী মোর্চার নেতা এবং কংগ্রেস বিধায়ক শাকিল আহমেদ রয়েছেন কানহাইয়ার সঙ্গে। বিহারের সিপিআই নেত্রী তথা দলের জাতীয় পরিষদের সদস্য নিবেদিতা ঝা জানাচ্ছেন, কানহাইয়ার সমাবেশে রাজ্যের বিজেপি-বিরোধী সব দলকেই তাঁরা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জল্পনা দানা বাঁধতে শুরু করেছে, তবে কি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-বিরোধী জোটের মুখ হবেন কানহাইয়াই?
বেগুসরাই থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বিজেপির গিরিরাজ সিংহের কাছে চার লক্ষ ২২ হাজার ভোটে হার স্বীকার করতে হয়েছিল কানহাইয়াকে। কিন্তু বাম শিবিরের নেতারা বলছেন, এই মুহূর্তে বিহারে বিরোধী রাজনীতিতে তেমন কোনও মুখ নেই। কানহাইয়াকে নিয়ে কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত কোনও আপত্তি তোলেনি। জেলে থেকেও নানা বিষয়ে টুইট করতে অভ্যস্ত আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদব অবশ্য কানহাইয়ার যাত্রা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বিহারের যুব রাজনীতির মুখ হয়ে ওঠার স্বপ্ন রয়েছে লালু-পুত্র তেজস্বীর। তাই কানহাইয়াকে সামনে রেখে মহাজোটের সম্ভাবনাকে আরজেডি কী ভাবে নেবে, তার উপরেই অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে বাম নেতাদের মত।
কাছের রাজ্য বিহারে এক তরুণ কমিউনিস্ট নেতা আলোড়ন ফেলে দেওয়ায় এ রাজ্যেও তাঁকে নিয়ে উৎসাহ নেহাত কম নেই! পটনার সমাবেশে যোগ দিতে রাজ্য সিপিআইয়ের তরফে পাঠানো হচ্ছে জাতীয় পরিষদের সদস্য প্রবীর দেবকে। কানহাইয়াকে দেখতে নিজেদের উদ্যোগেও পটনা যাচ্ছেন বেশ কিছু বাম কর্মী-সমর্থক। প্রবীরবাবুদের মনে পড়ছে জয়প্রকাশ নারায়ণের কথা। আবার সিপিএম নেতা গৌতম দেব বলছেন, ‘‘জয়প্রকাশ প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী হননি। কিন্তু একটা আন্দোলন এবং প্রজন্ম তৈরি করে দিয়েছিলেন।’’
কানহাইয়া অবশ্য বলছেন, ‘‘ভোটের জন্য ‘জন-গণ-মন’ যাত্রা নয়। একটা অন্যায় আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুধু যে মুসলিমদের নয়, সমাজের সব অংশকে নিয়ে সেটাই আমরা দেখাতে চাইছি।’’