মুম্বইয়ে তাঁর পালি হিলের অফিসে কঙ্গনা। বৃহস্পতিবার। পিটিআই
গত কাল পর্যন্ত তাঁর স্নায়ুযুদ্ধটা ছিল মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে। আজ সেই ‘যুদ্ধে’ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর নামও জড়ালেন কঙ্গনা রানাউত। শিবসেনা পরিচালিত বৃহন্মুম্বই পুরসভা তাঁর অফিসের একাংশ বেআইনি নির্মাণের অভিযোগে ভেঙে ফেলার পরে জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী আজ টুইটারে অভিযোগ করলেন, কুর্সির লোভে ‘সনিয়া-সেনা’-য় পরিণত হয়েছে শিবসেনা!
আজও দিনভর টুইটারে ব্যস্ত ছিলেন কঙ্গনা। কখনও নিজের সমর্থনে দিল্লি বা মধ্যপ্রদেশে বিক্ষোভের ছবি পোস্ট করেছেন। কখনও দিয়েছেন তাঁর মা আশাদেবীর ভিডিয়ো, যেখানে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘আমরা কংগ্রেসি পরিবার হওয়া সত্ত্বেও অমিত শাহ আমার মেয়েকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। মোদীজিকেও অনেক ধন্যবাদ।’’ উদ্ধবকে আজ কঙ্গনা আক্রমণ শুরু করেছেন সকাল সওয়া ৯টায়, দিনের দ্বিতীয় টুইট থেকে। লিখেছেন, ‘‘যে বিচারধারা নিয়ে বালসাহেব ঠাকরে শিবসেনা তৈরি করেছিলেন, আজ ক্ষমতার লোভে সেই বিচারধারাকে বিক্রি করে শিবসেনা হয়ে গিয়েছে সনিয়া-সেনা।’’
উদ্ধবকে তুইতোকারি করে গত কাল ভিডিয়ো-বার্তা দিয়েছিলেন কঙ্গনা। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে কটূ ভাষা ব্যবহারের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আজ দু’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে। আজকের টুইটে অবশ্য ‘তুমি’-তে উঠেছেন কঙ্গনা। নাম না-করে উদ্ধবের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘‘তোমার বাবার ভাল কাজ তোমায় ঐশ্বর্য দিতে পারে, কিন্তু সম্মান তোমায় নিজেকে অর্জন করতে হবে। আমার মুখ বন্ধ করলেও আমার আওয়াজ লাখো মানুষের মুখে ঘুরবে। কত জনের মুখ বন্ধ করবে? কত দিন সত্যিটা থেকে পালাবে, (যে) তুমি কিছুই না। স্রেফ বংশানুক্রমের একটি উদারহণ।’’
আরও পড়ুন: বেজিংকে বার্তা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর, বায়ুসেনায় রাফালের যোগ, চুপ প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন: প্রদেশ কংগ্রেসের ভাগ্যে ফের ‘পরিযায়ী’ সভাপতি
কঙ্গনা-পর্বে উদ্ধব সরকারের ‘খাপছাড়া ভূমিকা’ নিয়ে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি আজ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে রাজভবন সূত্রের খবর। মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা অজয় মেহতাকে আজ রাজভবনে ডেকে পাঠান রাজ্যপাল। এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘কঙ্গনা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার পরেই তাঁর অফিস ভাঙা হয়েছে। মেহতাকে রাজ্যপাল বলেছেন, তাঁর মনোভাবের কথা যেন মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে দেওয়া হয়।’’ রাজ্যপাল বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রকে রিপোর্ট পাঠাতে পারেন বলেও মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, অতীতে একাধিক বার উদ্ধব শিবিরের সঙ্গে কোশিয়ারির বিরোধ বেধেছে।
নিরাপত্তাহীন বোধ করলে মুম্বইয়ে না-আসার পরামর্শ-দেওয়া শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউতের সঙ্গেই প্রথমে কথার লড়াই বেধেছিল কঙ্গনার। আজ দলীয় মুখপত্র ‘সামনা’-য় রাউত লিখেছেন, কঙ্গনা মুম্বই সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন। তিনি সেই মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিলে ঝামেলা থাকে না। তবে কেন অফিস ভাঙা হয়েছে, তা পুর কমিশনার বলতে পারবেন। বস্তুত, রাউত আজ বলেই দিয়েছেন, ‘‘কঙ্গনা-পর্ব শেষ। এমনকি তা ভুলেও গিয়েছি। এখন আমরা সরকারি ও সামাজিক কাজকর্মে ব্যস্ত।’’ তবে গত কাল অফিস ভাঙার সময়ে পুলিশ ও পুরকর্মীদের ছবি টুইট করে কঙ্গনা লিখেছিলেন, ‘বাবর ও তাঁর সেনা’। সেই প্রসঙ্গে রাউত বলেছেন, ‘‘বাবরি আমরাই ভেঙেছিলাম। আমাদের কী বলবেন?’’
কঙ্গনার অফিস ভাঙা নিয়ে মামলার শুনানি ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছে বম্বে হাইকোর্ট। আজ ফ্যাশন ডিজ়াইনার মণীশ মলহোত্রকেও বেআইনি নির্মাণের অভিযোগে নোটিস পাঠিয়েছে বৃহন্মুম্বই পুরসভা। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আটওয়ালে কঙ্গনার বাড়িতে আসেন। পরে মন্ত্রী বলেন, ‘‘কঙ্গনা বলেছেন, নির্মাণ সংস্থা যদি তাঁর অজান্তে অফিসটির ২-৩ ইঞ্চি বাড়তি অংশ বানিয়ে থাকে, পুরসভা সেটুকু ভাঙলেই পারত। কিন্তু তারা ভিতরের অংশ ও আসবাব নষ্ট করেছে। কঙ্গনা ক্ষতিপূরণ চান।’’ আজ কঙ্গনা আবার দাবি করেছেন, যে বিল্ডিংয়ে তিনি থাকেন, সেটির মালিক শরদ পওয়ার। এই দাবি ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এনসিপি প্রধান।
আজ অভিনেত্রী দিয়া মির্জা কঙ্গনার অফিস ভাঙা ও রিয়া চক্রবর্তীকে হেনস্থার প্রতিবাদে টুইট করেন। দিয়াকে সমর্থন করে গাঁধীজির উক্তি টুইট করেন সোনম কপূর। কিন্তু ক্ষুব্ধ কঙ্গনা টুইটারে লেখেন, ‘‘মাফিয়া মেয়েগুলো রিয়ার সমর্থনে আমার ঘটনাটাকে ব্যবহার করছে। আমার লড়াই মানুষের জন্য। তার সঙ্গে কোনও মাদকাসক্তের তুলনা কোরো না।’’ কঙ্গনা আজ তাঁর অফিসে যান। সূত্রের দাবি, ক্ষয়ক্ষতি দেখে কেঁদেও ফেলেন। পরে জানান, অর্থাভাবে ভাঙা অফিস থেকেই কাজ করবেন তিনি।