kalyan bandyopadhyay

ওয়াকফ বিল নিয়ে বিতণ্ডা নিশিকান্তের সঙ্গে! জেপিসি থেকে কল্যাণ-সহ ১০ জন বিরোধী সাংসদ সাসপেন্ড

ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জোর বিতণ্ডা শাসক এবং বিরোধী সাংসদদের। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়ান বিজেপির নিশিকান্ত দুবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:১৬
Share:

ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে তরজায় জড়ালেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এবং তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) বৈঠকে জোর বিতণ্ডা শাসক এবং বিরোধী সাংসদদের। শুক্রবার তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়ান বিজেপির নিশিকান্ত দুবে। বিতণ্ডা এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, ১০ বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার ওই বৈঠকও ভেস্তে যায়। আগামী ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈঠক মুলতুবি রাখা হয়েছে বলে খবর।

Advertisement

জেপিসি-র শেষ ট্যুর ছিল ২১ জানুয়ারি। ২০ তারিখ কলকাতায় বৈঠক হয়। লখনউয়ে শেষ ট্যুর হয়। তার পর কমিটির তরফে নোটিস দেওয়া হয়, ২৪ এবং ২৫ জানুয়ারি ওয়াকফ বিল নিয়ে বৈঠক হবে। যদিও বিরোধী সাংসদদের অনেকে এর বিরোধিতা করেন। কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পালের কাছে তাঁরা অনুরোধ করেন বৈঠকের দিন পিছিয়ে ৩০-৩১ করা হোক। বিরোধীদের একাধিক সাংসদের দাবি, মৌখিক ভাবে ওই আবেদন মেনে নেওয়া হলেও সরকারি ভাবে নোটিস দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে ২৩ জানুয়ারি রাতেই দিল্লিতে চলে যান কল্যাণ-সহ বিরোধী সাংসদেরা। মঙ্গলবার বৈঠকে বলা হয়, ২৪ তারিখ জম্মু-কাশ্মীরের সাংসদদের বক্তব্য শোনা হবে। ২৭ তারিখ অন্যান্য সাংসদের বক্তব্য শোনা হবে। তারই প্রতিবাদ করেন কল্যাণেরা। তাঁদের দাবি, এত তাড়াহুড়ো কেন? এ নিয়ে নিশিকান্তের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তাঁর। উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর পর কল্যাণ, এ রাজা, সঞ্জয় সিংহ-সহ ১০ সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়। কল্যাণ বলেন, ‘‘মিটিংয়ের নামে প্রহসন হচ্ছে।’’ বস্তুত, ওয়াকফ বিল নিয়ে গত অক্টোবরেও যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তুমুল অশান্তি হয়। সে দিন আহত হন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ। কাচের বোতল ভেঙে তার হাত জখম হয়েছিল। বৈঠকে ‘অসংসদীয় ভাষা’ প্রয়োগের জন্য় কল্যাণকে এক দিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়।

শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সংসদের মধ্যে চূড়ান্ত অসংসদীয় ব্যাপার ঘটছে। অঘোষিত জরুরি ব্যবস্থা চলছে এখানে। জেপিসি-কে উপহাসের বস্তু বানিয়ে দিয়েছে ওরা (বিজেপি)।’’ কল্যাণের প্রশ্ন, ‘‘ওয়াকফ নিয়ে এত তাড়াহুড়ো কিসের? কোন সত্যকে আড়াল করতে চাইছে ওরা?’’ অন্য দিকে, নিশিকান্তের অভিযোগ, ‘‘ইচ্ছাকৃত ভাবে গন্ডগোল করার চেষ্টা করছেন বিরোধীরা। এই বিরোধীরা বেশির ভাগ সদস্যের উপর হাঙ্গামা করতে চান। যখনই আমি বলার জন্য মাইক হাতে নিয়েছি, তখনই বিরোধীরা আমায় বাধা দিয়েছেন। এর পর চেয়ারম্যান ওই সাংসদদের সাসপেন্ড করেছেন।’’ জানা যাচ্ছে, শুক্রবার কল্যাণদের অনুপস্থিতিতে বৈঠক হচ্ছে। তবে এর পর ২৭ জানুয়ারি বৈঠক হবে। তার পর চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। গত ৮ অগস্ট লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। বিলটি ‘অসংবিধানিক এবং মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারী’ বলে অভিযোগ তুলে বিরোধীরা একযোগে তা নিয়ে আপত্তি জানান। দীর্ঘ বিতর্কের শেষে ঐকমত্যের লক্ষ্যে বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, এসপি, আপ, মিম-সহ প্রায় সব ক’টি বিরোধী দলের বক্তব্য, ওই বিল সংবিধান-বিরোধী। এই বিল যেমন মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা কেড়ে নেবে, তেমনই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও আঘাত করবে বলে মনে করেন তাঁরা। বিলে বলা হয়েছে, আগামী দিনে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণা করার অধিকার ওয়াকফ বোর্ডের হাতে থাকবে না। ওই ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে জেলাশাসকদের হাতে। বিরোধীদের অভিযোগ, নতুন আইনে যাবতীয় ক্ষমতা জেলাশাসকের হাতে চলে যাবে। এর ফলে জেলাশাসক ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যানের থেকেও শক্তিশালী হয়ে উঠবেন। যাবতীয় গুরুত্ব হারাবে ওয়াকফ বোর্ড।

Advertisement

বর্তমানে যে আইন রয়েছে, তাতে ওয়াকফের দখল করা জমি বা সম্পত্তিতে কোনও ভাবেই পর্যালোচনা করার সুযোগ থাকে না। কারও আপত্তি সত্ত্বেও জমি বা সম্পত্তি দখল করতে পারে ওয়াকফ বোর্ড। তাতে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকে না সরকারের। নতুন বিলে তার বন্দোবস্ত রয়েছে। এটা নিয়েই আপত্তি উঠেছে। এ ছাড়া রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির নথিভুক্তিকরণ নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement