চিকিৎসক কাফিল খান। ফাইল চিত্র।
দুর্নীতি ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ থেকে তদন্ত কমিটি সম্পূর্ণ রেহাই দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বাবা রাঘব দাস মেডিক্যাল কলেজের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ কাফিল খানকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকে বরখাস্ত করে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ।
লাগাতার রাষ্ট্রের রোষে পড়তে হয়েছে কাফিলকে। কিন্তু এই লড়াকু চিকিৎসক হাল ছাড়তে নারাজ। গত কাল সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, বরখাস্তের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, ‘‘সরকারের দাবি আমার বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি অভিযোগ বহাল রয়েছে... চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে....এমনকি আদালতও জানে শিশুদের জীবন বাঁচাতে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম। সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমি আদালতে যাব।’’ উত্তরপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী (চিকিৎসা বিষয়ক) অভিযোগ করেছেন, কাফিল খান সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করতেন। এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কাফিলের জবাব, ‘‘২০১৬ সালের ৮ অগস্ট আমি মেডিক্যাল কলেজে যোগ দিয়েছিলাম। তার আগে যদি আমি প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করে থাকি, সেটা কারও দেখার বিষয় নয়। তবু তারা আমার বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ করেছে।’’
২০১৭ সালে বিআরডি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ৬৩টি শিশু অক্সিজেনের অভাবে মারা গিয়েছিল। সরকার অক্সিজেন সরবরাহকারীদের বিল না মেটানোয়, তারা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। অক্সিজেনের অভাবে শিশুগুলির অবস্থা সঙ্কটজনক হলে ছুটির মধ্যেও হাসপাতালে ছুটে আসেন কাফিল। পরিচিত লোকের কাছ থেকে শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে এসে শিশুগুলিকে বাঁচাতে চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু বাঁচানো যায়নি কাউকে। এর পরে সে দিন ডিউটিতে থাকা সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে সাসপেন্ড করে তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগ, ধর্মের কারণে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করা হয় কাফিলকে। সাসপেন্ড হয়েও হাসপাতালে ঢোকার অপরাধে আর এক দফা তাঁকে সাসপেন্ড করে সরকার, যা আদালত খারিজ করে দেয়।
তাঁকে বরখাস্ত করার সরকারি সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কাফিলের বক্তব্য, ‘‘আমি মুসলিম বলে আমাকে টার্গেট করা হচ্ছে এমনটা ভাববেন না। নিজেদের লোকজনকে বাঁচাতে ওদের একটা বলির পাঁঠা চাই। সে দিন আমার জায়গায় যদি অন্য কেউ থাকতেন, তাঁকেও এই ভাবেই হেনস্থা করা হত।’’