প্রয়াত গৌরী আম্মা। —ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ আট দশকের রাজনৈতিক জীবনে ইতি। প্রয়াত অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা দেশে নারী ক্ষমতায়নের সপক্ষে সওয়াল করা অন্যতম মুখ কেআর গৌরী আম্মা। বয়স হয়েছিল ১০২ বছর। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় বেশ কিছু দিন ধরেই ভুগছিলেন গৌরী আম্মা। মঙ্গলবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কেরলের আলাপ্পুঝা জেলার পট্টনাক্কড়ে প্রভাবশালী পরিবারের মেয়ে হলেও ইঝাভা সম্প্রদায়ে তিনিই প্রথম মহিলা, যিনি আইনে ডিগ্রি লাভ করেন। কলেজে থাকাকালীনই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন গৌরী আম্মা। ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তার জন্য নৃশংস অত্যাচারের সাক্ষীও হতে হয়েছিল তাঁকে।
সেখান থেকে কেরল বিধানসভার সবচেয়ে বেশি দিনের মহিলা বিধায়ক, কেরল বিধানসভার প্রবীণতম মহিলা সদস্য, প্রবীণতম মহিলা মন্ত্রী এবং রাজ্যে সর্বাধিক নির্বাচন জয়ী বিধায়ক হওয়ার পালক রয়েছে তাঁর মুকুটে। ১৯৪৮ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ১৬ বার নির্বাচনে নাম লিখিয়ে ১৩ বারই জয়লাভ করেন।
১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টি যখন ভেঙে যায়, তখন সিপিএমে চলে যান গৌরী আম্মা। তাঁর স্বামী টিপি টমাস চলে যান সিপিআইয়ে। তাতে তাঁদের দাম্পত্য জীবনেই বলতে গেলে কংক্রিটের দেওয়াল উঠে যায়। সেই সময় দু’জনে দুই দল থেকে মন্ত্রী ছিলেন। তিরুঅনন্তপুরমে পাশাপাশি সরকারি বাসভবনে আলাদা আলাদা থাকতেন।
১৯৯৪ সালে দলবিরোধী কাজের অভিযোগে সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হন গৌরী আম্মা। তার পর জনাতিপথি সংরক্ষণ সমিতি নামের নিজের আলাদা দল গঠন করেন। ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ)-এর জোট সরকারেও একসময় শামিল ছিল তাঁর দল। তিনি নিজে সে সময় কৃষি, পশুপালন দফতরের দায়িত্বে ছিলেন। পরে ইউডিএফ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। গৌরী আম্মার ১০১তম জন্মদিনে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন তাঁকে বিশেষ সম্মান জানিয়েছিলেন। পিনারাইয়ের মতে, ‘‘গৌরী আম্মাকে ছাড়া কেরলের রাজনৈতিক ইতিহাস অসম্পূর্ণ। কমিউনিজমের অন্যতম স্তম্ভ তিনি।’’ তাঁর মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ করেছেন বিজয়ন।