মোদীর বাসভবনে ঢোকার আগে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। ছবি সৌজন্য টুইটার।
১০ জনপথের সঙ্গে দূরত্বটা তৈরি হচ্ছিল ২০১৯-এর গোড়ার দিক থেকেই। অবশেষে তা বিদ্রোহের আকার নিল। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া নিজে দল ছেড়ে বিজেপির পথে পা বাড়াচ্ছেন তো বটেই, বিদ্রোহে জুড়ে নিলেন মধ্যপ্রদেশের অন্তত ২১ জন কংগ্রেস বিধায়ককে। জ্যোতিরাদিত্য কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরপরই পদত্যাগ করে দিয়েছেন এই ২১ জন। এর ফলে রাজ্যে কমল নাথের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের পতন এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
গত কয়েক দিন ধরেই চাপা ডামাডোল চলছিল মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসে। সোমবার থেকে দলীয় নেতাদের সঙ্গে সমস্ত রকমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন জ্যোতিরাদিত্য। একই সঙ্গে খবর পাওয়া যাচ্ছিল, কমল নাথ সরকারের ছয় মন্ত্রী-সহ ১৬ জন কংগ্রেস বিধায়ককে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে গিয়ে হোটেলে রেখেছে বিজেপি।
ঘটনা মোড় নেয় মঙ্গলবার সকাল থেকে। অমিত শাহের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন জ্যোতিরাদিত্য। তার পরই দল থেকে ইস্তফা দেন। ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন দলের অন্তর্বর্তী সভাপতি সনিয়া গাঁধীর কাছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছয় মন্ত্রী-সহ ২০ জন কংগ্রেস বিধায়কও ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন রাজ্যপালের কাছে।
কংগ্রেস বিধায়কদের ইস্তফা। ছবি সৌজন্য টুইটার।
জ্যোতিরাদিত্য বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন বলেই খবর। সেই সঙ্গে তাঁকে রাজ্যসভার টিকিট দেওয়া হচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে। কোনও কোনও সূত্রের খবর, অদূর ভবিষ্যতে তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নিতে পারেন নরেন্দ্র মোদী।
এই মুহূর্তে কংগ্রেসের কোনও সংসদীয় বা পরিষদীয় প্রতিনিধি পদে ছিলেন না জ্যোতিরাদিত্য। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে নিজের ঘনিষ্ঠ বিধায়কদের কংগ্রেস থেকে বের করে এনে, তিনি পতনের মুখে দাঁড় করিয়ে দিলেন মাত্র মাস ১৫ আগে ক্ষমতায় বসা কমল নাথ সরকারকে।
২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার ভোট হয় ২০১৮ সালে। ম্যাজিক ফিগার ১১৬-র থেকে ২টি আসন কম (১১৪) পায় কংগ্রেস। বিজেপি জেতে ১০৯ আসনে। বাকি ৭টির মধ্যে ৪টি আসনে জেতেন নির্দল বিধায়করা। ২টিতে বিএসপি, ১টিতে এসপি।
এসপি, বিএসপি এবং এক নির্দল-সহ মোট ১২০ জনের সমর্থন নিয়ে ২০১৮-র ১৭ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেছিলেন কমল নাথ। পরবর্তীতে দুই বিজেপি বিধায়ক দল ছাড়েন। ফলে এই মুহূর্তে রাজ্যে মোট বিধায়ক সংখ্যা ২২৮। সরকার গঠনের ম্যাজিক ফিগার ১১৫। কংগ্রেসের সরকার ফেলে বিজেপিকে ক্ষমতায় আসতে গেলে, ১৩ জন কংগ্রেস বিধায়ককে ইস্তফা দেওয়াতে পারলেই চলত। তাতে মোট বিধায়ক সংখ্যা নেমে আসত ২১৫-তে। ম্যাজিক ফিগার ১০৭। যা বিজেপির একার হাতে রয়েছে। দেখা যাচ্ছে ১৩-র তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক কংগ্রেস বিধায়ক ইস্তফা দিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই দিয়ে দিয়েছেন ২১ জন। আরও কয়েক জন লাইনে আছেন বলে খবর। যত বেশি কংগ্রেস বিধায়ক ইস্তফা দিয়ে বিধানসভা ছাড়বেন, বিজেপি ততই সুবিধেজনক অবস্থায় চলে যাবে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সোমবার যে ১৬ জন বিধায়ক ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই জ্যোতিরাদিত্যের ঘনিষ্ঠ। তাঁরা সমর্থন তুলে নিলে সরকারের পতন যে অনিবার্য তা স্পষ্ট বুঝেছিল কংগ্রেস। তাই সিন্ধিয়া ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বিধায়কদের দলে ফিরিয়ে আনার সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যান কমল নাথ। কংগ্রেস সূত্রের খবর, আলোচনার জন্য সব দিক খোলা রাখা হচ্ছে, এমনও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল জ্যোতিরাদিত্যকে। কিন্তু সেই প্রস্তাব যে খুব একটা কাজে দেয়নি এ দিনের ছবি থেকে তা স্পষ্ট।
জ্যোতিরাদিত্যর ইস্তফাপত্র। ছবি সৌজন্য টুইটার।
আসলে কমল নাথ নন, জ্যোতিরাদিত্যের বিদ্রোহের লক্ষ্য স্বয়ং সনিয়া এবং রাহুল। ২০১৮-র বিধানসভা ভোটে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহের বদলে, কমল নাথ এবং জ্যোতিরাদিত্যকে সামনে রেখে লড়েছিল কংগ্রেস। বোঝা গিয়েছিল, ক্ষমতায় এলে এই দু’জনের কোনও একজনকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হবে। শেষ পর্যন্ত কমল নাথকে বেছে নেয় ১০ নম্বর জনপথ। এর পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদও জ্যোতিরাদিত্যকে না দিয়ে কমল নাথকেই দেওয়া হয়। আর এখান থেকেই জ্যোতিরাদিত্যের সঙ্গে সনিয়া-রাহুলের মন কষাকষির শুরু। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের বিপর্যয়ের পর, জ্যোতিরাদিত্য আরও দূরত্ব বাড়াতে থাকেন দলের সঙ্গে। কিন্তু প্রকাশ্যে দলবিরোদী কোনও কথা বলেননি। নরেন্দ্র মোদী সরকার জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর, সেই সিদ্ধান্তকে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে বিদ্রোহের প্রথম সঙ্কেতটা ছুড়েছিলেন সিন্ধিয়া। তখন থেকেই জল্পনা শুরু হয়ে যায়, তিনি কি দল ছাড়ছেন? বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন? অবশেষে সিন্ধিয়ার বিদ্রোহ তার বৃত্ত সম্পূর্ণ করার পথে।
আরও পড়ুন: নীরব মোদীর মতো ছক ছিল! টোপ দিয়ে দেশে আনা হয়েছিল রাণাকে
আরও পড়ুন: মোদীকে তিক্ত-সফর থেকে বাঁচাল করোনা