(বাঁ দিকে) জাস্টিন ট্রুডো, সঞ্জয় বর্মা (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভারতবিরোধী খলিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত দিচ্ছেন। এমনকি, তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদের মধ্যেও রয়েছেন খলিস্তানপন্থীরা। ভারতে ফিরে শুক্রবার এই অভিযোগ করলেন সদ্যপ্রাক্তন কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয় বর্মা।
গত ১৩ অক্টোবর কানাডা পুলিশের ‘ইন্টিগ্রেটেড হোমিসাইড ইনভেস্টিগেশন টিম’ (আইএইচআইটি)-এর রিপোর্ট উদ্ধৃত করে ট্রুডো সরকার জানিয়েছিল সে দেশের মাটিতে খলিস্তানপন্থী জঙ্গি হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে খুনের ঘটনায় ভারতীয় হাই কমিশনার সঞ্জয়ের ‘স্বার্থ’ জড়িত ছিল। ওই অভিযোগের পরেই দু’দেশের কূটনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়। সঞ্জয়-সহ কয়েক জন শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় কূটনীতিককে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদী সরকার নয়াদিল্লির কানাডা হাই কমিশনের কয়েক জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিল।
ঘটনাচক্রে, এর পরেই ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টির অন্দরে বিদ্রোহের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বেশ কয়েক জন পার্লামেন্ট সদস্য প্রকাশ্যে তাঁর ইস্তফার দাবিতে সরব হয়েছেন। এই আবহে ভারতে ফিরে সঞ্জয় শুক্রবার বলেন, ‘‘ট্রুডোর বৃত্তে অনেকে আছেন, যাঁরা ভারতবিরোধী এবং খলিস্তানপন্থী। ২০১৮ সালে তাঁর ভারত সফরের সময় কোন খলিস্তানপন্থীদের দেখা গিয়েছিল, তা আমরা সকলে জানি।’’ প্রসঙ্গত, ট্রুডোর ওই সফরের সময় কানাডা সরকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল খলিস্তানপন্থী জশপাল সিংহ অটওয়ালকে।
বিদেশ মন্ত্রকের তরফে পাল্টা অভিযোগ করা হয় যে, কানাডার আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনে কট্টরপন্থী খলিস্তানি গোষ্ঠীগুলির সমর্থন পাওয়ার জন্য ট্রুডো সরকার নতুন করে নিজ্জর বিতর্ক সামনে নিয়ে আসছে। খলিস্তানি নেতা নিজ্জরকে ২০২০ সালে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে ঘোষণা করেছিল ভারত। তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারের একটি গুরুদ্বারের সামনে তাঁকে হত্যা করা হয়। এর পরে নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন ট্রুডো। যদিও কানাডায় প্রাক্তন ভারতীয় হাই কমিশনার সঞ্জয় বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ট্রুডো সরকার এ বিষয়ে আদালতগ্রাহ্য কোনও তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেনি। আমরা ভিয়েনা কনভেনশনের বিধি মেনেই প্রতিটি পদক্ষেপ করেছি।’’
কূটনীতিকদের একাংশ মনে করছেন, নয়াদিল্লির চাপ সত্ত্বেও ট্রুডোর পক্ষে খলিস্তানপন্থীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা কঠিন। কারণ, ট্রুডো একটি সংখ্যালঘু সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যে সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য তাঁকে সমর্থন নিতে হচ্ছে নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা জগমীত সিংহের। জগমীত নিজে ঘোষিত খলিস্তানপন্থী। গত অক্টোবরে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় বক্তৃতায় বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর কানাডায় খলিস্তানপন্থীদের দৌরাত্ম্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। জয়শঙ্করের দাবি, ভোটের আগে কানাডায় ঘরোয়া রাজনীতি শক্তিশালী করছে খলিস্তানিদের।