রোহিনটন এফ নরিম্যান। ফাইল চিত্র।
বিচার বিভাগকে রক্ষা করতেন এমন এক সিংহকে হারাচ্ছি,’’ বিচারপতি রোহিনটন এফ নরিম্যানের অবসরের দিনে এ ভাবেই তাঁর স্মৃতিচারণ করলেন প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা।
আজ কর্মজীবনের শেষ দিনে প্রথা মেনে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে বসেছিলেন বিচারপতি নরিম্যান। তাঁর বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘বিচারপতি নরিম্যান তাঁর জ্ঞান ও স্বচ্ছতার জন্য পরিচিত। তিনি সব সময়েই যা ঠিক তার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।’’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমার মনের অবস্থা ঠিক মতো বর্ণনা করতে পারছি না।’’ প্রধান বিচারপতির কথায়, ‘‘বিচারপতিদের সম্পর্কে তৈরি হওয়া ভুল ধারণা বদলানো প্রয়োজন। প্রতি সপ্তাহে ১০০টি মামলার শুনানির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া সহজ নয়। সেইসঙ্গে কোর্টের প্রশাসনিক দায়িত্বও সামলাতে হয়।’’
বিচারপতি নরিম্যান বলেন, ‘‘সাত বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে থাকার সময়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে। পড়তে হয়েছে অনেক বেশি। খতিয়ে দেখতে হয়েছে বহু ফাইল।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি মনে করি না সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হওয়ার স্বাভাবিক প্রত্যাশা কারও থাকে। আমি বিশ্বাস করি ভারতবাসী ও যাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁদের এই সর্বোচ্চ আদালত থেকে নির্দিষ্ট মানের বিচার পাওয়ার স্বাভাবিক প্রত্যাশা থাকে। সে জন্য এই নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’’ তাঁর মতে, বার থেকে আরও অনেক আইনজীবীকে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে নিয়োগ করা প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁদের এই নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হবে তাঁদের বলব, কখনও না বলবেন না। পেশা থেকে অনেক পাওয়ার পরে ফেরত দেওয়াটা তাঁদের কর্তব্য।’’
বিশিষ্ট আইনজীবী ফলি নরিম্যানের ছেলে রোহিনটন বিচারপতি পদে নিযুক্ত হওয়ার আগে সলিসিটর জেনারেলের দায়িত্ব সামলেছেন।
গত কয়েক বছরে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে নানা কারণে প্রশ্ন উঠেছে। সেই পরিস্থিতির মধ্যে বিচারপতি নরিম্যানের বিভিন্ন রায় বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য বলে মনে করেন আইনজীবীরা। তাঁর দেওয়া রায়েই খারিজ হয় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা। ওই ধারা প্রয়োগ করে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের জন্য নাগরিককে গ্রেফতার করতে পারত পুলিশ। বিচারপতি নরিম্যান তাঁর রায়ে জানান, ওই ধারা বাক্স্বাধীনতার বিরোধী। বাক্স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের পক্ষে একান্ত প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি যে বেঞ্চের রায়ে সমকামী সম্পর্কের উপর থেকে অপরাধের তকমা সরে গিয়েছে সেই বেঞ্চেরও সদস্য ছিলেন তিনি। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের যে আইনজীবীর সঙ্গে আমি প্রথম কোনও মামলা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম তিনি বিচারপতি নরিম্যান।’’