ফাইল ছবি
একের পর এক মামলায় গ্রেফতার হচ্ছেন সমাজকর্মী, সাংবাদিকেরা। নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধী শিবিরের। এখন দেশের বিচার বিভাগই কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে বলে মত নানা শিবিরের। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা জানালেন, বিচার বিভাগের দায়বদ্ধতা রয়েছে কেবল সংয়বিধানের প্রতি।
আজ সান ফ্রান্সিসকোয় এক অনুষ্ঠানে বিচারপতি রমণাকে সংবর্ধনা দেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিকেরা। সেই অনুষ্ঠানেই রমণা বলেন, ‘‘আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি উদযাপন করছি। ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের বয়স ৭২। আমাদের সংবিধানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ভূমিকা ও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে সেগুলি সম্পর্কে আমরা সচেতন নই।’’
প্রধান বিচারপতির মতে, ‘‘শাসক দল মনে করে সরকারের সব কাজই আদালতের সিলমোহর পাবে। বিরোধী দল চায় আদালত তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূরণে সাহায্য করুক। দেশবাসীর মধ্যে সংবিধান ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির কাজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। তার ফলেই সব শিবিরের এমন ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে।’’
বিচারপতি রমণার মতে, ‘‘সাধারণ দেশবাসীর মধ্যে অজ্ঞতার প্রচার করা হয়েছে। তার ফলে যে সব শক্তি ভারতীয় গণতন্ত্রের একমাত্র নিরপেক্ষ অঙ্গ বিচার বিভাগকে দমিয়ে রাখতে চায় তাদের সুবিধে হচ্ছে। আমি স্পষ্ট বলছি, বিচার বিভাগ একমাত্র সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ। সংবিধানে নির্দেশিত ভারসাম্য কার্যকর করতে গেলে ভারতে সাংবিধানিক সংস্কৃতি তৈরি করা প্রয়োজন। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষের অংশগ্রহণই গণতন্ত্রের মূল কথা।’’
প্রধান বিচারপতির মতে, ভারত ও আমেরিকা বৈচিত্রের জন্যই পরিচিত। এই বৈচিত্রকে সম্মান করতে হবে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘আমেরিকা বৈচিত্রকে সম্মান করে বলেই আপনারা এখানে এসে কঠিন পরিশ্রম ও দক্ষতার ফলে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। বিভিন্ন ধরনের পরিবার থেকে আসা প্রতিভাধর ব্যক্তিকে সম্মান করা প্রয়োজন। তবেই সমাজের সব অংশের বিশ্বাস অর্জন করা যায়। এই নীতি ভারত-সহ বিশ্বের সব দেশেরই মেনে চলা উচিত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সকলকে সঙ্গেনিয়ে চলার নীতিই শান্তি ও উন্নতির মূল চাবিকাঠি। যে সব বিষয় ঐক্যবদ্ধ করতে পারে সেগুলির দিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিত। একবিংশ শতাব্দীতে সংকীণ ও বিভাজনকারী কোনও বিষয়ের ভিত্তিতে মানবিক ও সামাজিক সম্পর্ক চলবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। সকলকে সঙ্গে নিয়ে না চলার অর্থ বিপর্যয় ডেকে আনা।’’
ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের প্রতি প্রধান বিচারপতির বার্তা, ‘‘দয়া করে মনে রাখবেন, আপনারা কোটিপতি হতে পারেন। কিন্তু সেই সম্পদ ভোগ করার জন্য শান্তি প্রয়োজন।ভারতে আপনাদের বাবা-মাদেরও এমন সমাজে থাকতে পারা উচিত যেখানে ঘৃণা ও হিংসারস্থান নেই।’’