—প্রতীকী ছবি।
এক জন বিচারককে ন্যায়পরায়ণ এবং নিরপেক্ষ হতে হবে। কিন্তু তার মানে এই নয়, তিনি চোখ বন্ধ করে থাকবেন। নীরব দর্শক হয়ে রোবটের মতো কাজ করবেন। একটি ধর্ষণের মামলার শুনানি চলাকালীন এই বলেই বিহারের এক নিম্ন আদালত এবং পটনা হাই কোর্টের সমালোচনা করল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, এই ধর্ষণের মামলার তদন্তে অনেক ত্রুটি রয়েছে। তাই অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের সাজা খারিজ করে ত্রুটি খতিয়ে দেখার পর রায় পুনর্বিবেচনার জন্য মামলাটি আবার হাই কোর্টে ফেরত পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
২০১৫ সালে বিহারের ভাগলপুরে নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ অনুযায়ী, ওই বছরের ১ জুন নাবালিকার বাড়িতেই তাকে ধর্ষণ করা হয়। পরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় তাকে।
এর পর ২০১৭ সালে ভাগলপুরের একটি নিম্ন আদালত অভিযুক্তকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে এবং মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়। অপরাধটি ‘বিরলতমের মধ্যে বিরল’ বলেও মন্তব্য করেন নিম্ন আদালতের বিচারক। এর পর অভিযুক্ত পটনা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। ২০১৮ সালে পটনা হাই কোর্ট অভিযুক্তের আবেদন খারিজ করে দেয় এবং মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। এর পর সাজার নির্দেশ পুর্নবিবেচনা করে দেখার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন অভিযুক্ত।
মঙ্গলবার সেই মামলারই শুনানি চলছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গাভাই, জেবি পারদিওয়ালা এবং প্রশান্ত কুমার মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে। শুনানি চলাকালীন ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, মামলাটির তদন্তে অনেক গুরুতর ত্রুটি রয়েছে। ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে না পেয়েই রায় ঘোষণা হয়েছে। এমনকি, চিকিৎসককে দিয়ে অভিযুক্তের মেডিক্যাল পরীক্ষাও করানো হয়নি।
এই বিষয়ে ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘যে ত্রুটিগুলির কথা বলা হচ্ছে, তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। বলতে বাধ্য হচ্ছি, তদন্তকারী আধিকারিকদের তদন্তে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে। এ রকম একটি মামলায় এই ত্রুটির জায়গা নেই।’’
এই মামলায় নিম্ন আদালত এবং পটনা হাই কোর্টের সমালোচনাও করেছে শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ।
আদালতে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান খতিয়ে দেখা হয়নি বলে মন্তব্য করে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘‘সরকারি আইনজীবী বা নিম্ন আদালতের প্রিসাইডিং অফিসার অনেক দিক খতিয়ে দেখার বা সত্যের কাছে পৌঁছনোর প্রয়োজন বোধ করেননি। নীরব দর্শক হয়ে ছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত হাই কোর্টও বিষয়টি খতিয়ে দেখেনি। ’’
একই সঙ্গে শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, ‘‘বিচারককে অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ এবং নিরপেক্ষ হতে হবে। এর অর্থ এই নয় যে, বিচারক নিজের চোখ বন্ধ করে নীরব দর্শক হয়ে থাকবেন। একটি রোবট বা রেকর্ডিং মেশিনের মতো কাজ করবেন।’’