সিদ্দিক কাপ্পান। ফাইল চিত্র।
দু’বছর চার মাস জেল খাটার পরে গত ২ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেয়েছেন কেরলের সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান। জেল থেকে বেরিয়ে জানালেন, দিনের পর দিন তাঁর উপর ‘অত্যাচার’ চালিয়েছে পুলিশ। লাগাতার চাপ দিয়ে গিয়েছে, মাওবাদী-যোগ স্বীকার করে নেওয়ার জন্য।
হাথরসে দলিত তরুণীর গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনার খবর সংগ্রহে গিয়ে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন কাপ্পান। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মীয় উস্কানি দেওয়া, ষড়যন্ত্র, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার। তাদের দাবি ছিল, নিষিদ্ধ সংগঠন ‘পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া’ (পিএফআই)-এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন কাপ্পান। সব অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। কাপ্পানের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে সরব হয় মানবাধিকার সংগঠনগুলি। গত বছর শেষের দিকে সুপ্রিম কোর্টে ইউপিএ মামলায় জামিন পান কাপ্পান। জামিন মেলে পিএমএলএ মামলাতেও।
২৮ মাস পরে স্ত্রী-পুত্রকে কাছে পেয়ে খুশি ৪৩ বছর বয়সি এই সাংবাদিক। তিনি বলেন, ‘‘জামিন পেয়ে আমি খুশি। কিন্তু এটা অর্ধেক বিচার। জেল থেকে বেরিয়ে অনুভব করতে পারছি মুক্তির স্বাদ কী।’’ লখনউয়ের কারাগার থেকে বেরিয়ে দিল্লি এসেছেন কাপ্পান। আগামী ছ’সপ্তাহ তিনি দিল্লিতেই থাকবেন। জামিনের শর্ত সেটাই।
একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাপ্পান জানিয়েছেন, হাথরস-কাণ্ডে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে উত্তরপ্রদেশ সরকার তাঁকে জেলে পুরেছিল। তিনি বলেন, ‘‘নিজেদের অস্বস্তি লুকোতে আমাকে বলির পাঁঠা করেছিল সরকার। ওই ভয়ানক ধর্ষণ-খুনের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রঙ দিয়েছিল।’’ কাপ্পান দাবি করেছেন, পিএফআই কেন, কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য নন তিনি। উত্তরপ্রদেশ সরকার তাঁকে ‘ভুয়ো সাংবাদিক’ তকমা দিয়েছিল। সে প্রসঙ্গে কাপ্পান জানিয়েছেন, তিনি ‘কেরল ইউনিয়ন ফর ওয়ার্কিং জার্নালিস্টস’-এর সম্পাদক ছিলেন। তাঁর প্রশ্ন, তা হলে কি এই সংগঠনটিও ভুয়ো! কাপ্পানের অভিযোগ, তাঁর প্রেসের পরিচয়পত্রটি বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ। এখনও ফেরত দেওয়া হয়নি তাঁকে।
পুলিশের বিরুদ্ধে কাপ্পানের আরও অভিযোগ, জেলে থাকাকালীন তাঁকে নির্মম ভাবে মারধর করা হয়েছিল। তদন্তের নামে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করা হত। কাপ্পান বলেন, ‘‘আমাকে বারবার চড় মেরে গিয়েছে ওরা। দু’পায়ে মেরেছে, পায়ের পাতায় মারা হয়েছে। ওরা চাপ দিত, আমি মাওবাদী বা ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত, এমন কিছু স্বীকার করানোর জন্য। অত অত্যাচার সত্ত্বেও ওদের অভিযোগে আমি ‘না’ বলে এসেছি।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘শুধু মারধর নয়, অদ্ভুত প্রশ্ন করত পুলিশ। যেমন আমি কোনও দিন পাকিস্তানে গিয়েছি কি না? আমি গরুর মাংস খেতাম কি না?’’ ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল জেলে অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলেন কাপ্পান। ডায়াবিটিস রোগী, তার মধ্যে কোভিড পজ়িটিভ ধরা পড়ে তাঁর। মথুরা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছিল কাপ্পানকে। সেখানে তাঁকে ধাতব হাতকড়া পরিয়ে রাখা হত। কাপ্পানের অভিযোগ, সাত দিন তাঁকে শৌচাগারে যেতে দেয়নি পুলিশ। প্লাস্টিকের বোতলে মূত্রত্যাগ করতে হত। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে দিল্লির এমসে স্থানান্তরিত করা হয়। সাক্ষাৎকার শেষে বলেছেন, ‘‘ভারতে সাংবাদিকতা বিপদের মুখে।’’