—ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশ শনিবার সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে সাংবাদিক প্রশান্ত কানোজিয়াকে তুলে আনার পরে রাতে গ্রেফতার দেখিয়েছে তাঁকে। আবার ওই দিনই সন্ধ্যায় নয়ডা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ‘নেশন লাইভ’ টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান ইশিকা সিংহ এবং সম্পাদক অনুজ শুক্লকে। এঁদের সকলের বিরুদ্ধেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পক্ষে মানহানিকর বক্তব্য প্রকাশের অভিযোগে বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তার সঙ্গে আইন ভেঙে সম্প্রচার করার একটি মামলাও দায়ের হয়েছে সংবাদ চ্যানেলটির প্রধান ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে।
এই গ্রেফতার নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করতে বিজেপি সরকার উঠেপড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। কেউ কেউ বলেছেন, ‘এ ভাবে নিজেকেই হাস্যকর করে তুলছেন যোগী!’ বিবৃতি দিয়ে সাংবাদিকদের গ্রেফতারের নিন্দা করে এই ঘটনাকে ‘আইনের কর্তৃত্ববাদী অপব্যবহার’ বলে বর্ণনা করেছে সম্পাদকদের সংগঠন ‘এডিটরস গিল্ড’। ‘দ্য ওয়্যার’-এর প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক সিদ্ধার্থ বরদারাজন প্রশান্তের গ্রেফতারকে ‘আইনের যথেচ্ছাচার’ বলে টুইটে বর্ণনা করেছেন। বিরোধী দল কংগ্রেসের মুখপাত্র ও বিশিষ্ট আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি টুইটে বলেন, ‘কেবলমাত্র একটি ভিডিয়ো শেয়ার করার জন্য সাংবাদিককে গ্রেফতার করার ঘটনা বেআইনি, কর্তৃত্ববাদী এবং আইনের অপব্যবহার। এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রতি আমার আর্জি, স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করুন।’
শুক্রবার এক মহিলা লখনউয়ে যোগী আদিত্যনাথের বাড়ির সামনে হাজির হয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এখন আর গুরুত্ব দিচ্ছেন না। মহিলার সাক্ষাৎকারের ভিডিয়োটি ভাইরাল হয়। ‘দ্য ওয়্যার’-এর প্রাক্তন কর্মী বর্তমানে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক বছর ২৬-এর প্রশান্ত কানোজিয়া ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োটি টুইটার ও ফেসবুকে পোস্ট করে মন্তব্য করেছিলেন, ‘প্রেম লুকোনো যায় না যোগীজি!’
প্রশান্তের স্ত্রী জাগিশা অরোরা জানিয়েছেন, শনিবার ভোরে তাঁদের ঘুম ভাঙে এক বন্ধুর ফোনে। তিনি জানান, কয়েক জন লোক প্রশান্তকে খোঁজাখুঁজি করছে। তার পরে দুপুরে সাধারণ পোশাকের দু’জন লোক পশ্চিম দিল্লির বিনোদ নগরে তাঁদের আবাসনে আসে। প্রশান্ত তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে যান। স্ত্রী জানাচ্ছেন, পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘরে ফিরে প্রশান্ত জানান— জামাকাপড় বদলাতে এসেছেন, আগন্তুকদের সঙ্গে তাঁকে যেতে হবে। পরে পুলিশ তাঁকে জানায়, উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রশান্তকে লখনউয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার রাতে লখনউয়ের হজরতগঞ্জ থানায় পুলিশের এক এসআই মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে মানহানিকর মন্তব্য করার অভিযোগে প্রশান্তের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেফতার হন প্রশান্ত। বেশি রাতে প্রশান্তকে স্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথাও বলিয়ে দেয় পুলিশ।
টেলিভিশন চ্যানেলে ভিডিয়োটি সম্প্রচারের ফলে মুখ্যমন্ত্রীর মানহানি হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে ‘নেশন লাইভ’ চ্যানেলের দুই কর্তাকেও শনিবারই গ্রেফতার করা হয়। এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘চ্যানেলটির এই ভিডিয়ো প্রচারে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারত!’’ রবিবার উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানায়, তদন্তে দেখা গিয়েছে বেশ কিছু কাগজপত্র ছাড়াই চ্যানেলটির সম্প্রচার চলছিল। সেই কারণে বেআইনি ভাবে চ্যানেল সম্প্রচারের অভিযোগেও মামলা করা হয়েছে ইশিকা ও অনুজের বিরুদ্ধে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।