কয়েকটি বাড়ির অবস্থা খুব সঙ্গিন হওয়ায় সেই পরিবারগুলির আশ্রয় হয়েছে পুরসভার আশ্রয়কেন্দ্রে। ছবি: পিটিআই ।
ডুবন্ত শহর জোশীমঠ নিয়ে ইতিমধ্যেই হিমশিম খাচ্ছে উত্তরাখণ্ডের প্রশাসন। তার মধ্যেই জোশীমঠ থেকে ৮২ কিলোমিটারের দূরে কর্ণপ্রয়াগে একাধিক বাড়ি এবং রাস্তায় ফাটল ধরার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। যার জেরে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় এক দশক আগে কর্ণপ্রয়াগের বহুগুণা কলোনির দু’ডজনেরও বেশি বাড়িতে ফাটল ধরতে শুরু করে। এর পর বছরের পর বছর ধরে সেই বাড়িগুলিতে ফাটল আরও বেড়েছে। কিন্তু কোথাও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে ভগ্নপ্রায় বাড়িগুলিতেই রাত কাটাচ্ছে অনেক পরিবার। কোনও কোনও বাড়ির অবস্থা খুব সঙ্গিন হওয়ায় তাঁদের পাকাপাকি আশ্রয় হয়েছে পুরসভার আশ্রয়কেন্দ্রে।
স্থানীয় বাসিন্দা তুলাদেবী বিস্ত জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি ২০১০ সালে তৈরি এবং তিন বছর পরই তাঁর বাড়ির দেওয়ালে ফাটল দেখা দেয়। তাঁর কথায়, “২০১৩ সালের আগে সব কিছু ঠিক ছিল। প্রথমে আমরা খুব একটা গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু এখন বাড়ির অনেকগুলি কামরার অবস্থা বিপজ্জনক, যা চিন্তায় ফেলেছে।”
তুলাদেবীর বাড়ির পাশেই কমলা রাতুরির বাড়ি। তিনিও একই সমস্যার সম্মুখীন। তবে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হরেন্দ্র সিংহ নামে এক স্থানীয়ের বাড়ি। ফাটল বেড়ে বাড়ি হেলে যাওয়ার কারণে সপরিবার ঘর ছেড়েছেন হরেন্দ্র। তাঁর বাড়ির বাইরের ঘরের একটি দেওয়ালে একটি বড় ফাটল দেখা গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে বাড়ির দু’টি স্তম্ভ। দোতলা বাড়ির প্রথম তলা ধসে পড়তে শুরু করেছে।
স্থানীয় ভগবতীপ্রসাদ সতী অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য নির্মাণ কাজকেই দায়ী করেছেন। প্রশাসনের তরফেও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ।
যদিও চামোলির জেলাশাসক হিমাংশু খুরানার দাবি যে, প্রশাসন পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন এবং পুরসভার তরফে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়েছে। শীঘ্রই পাকা বন্দোবস্ত করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২ জানুয়ারি থেকে শুরু করে বিগত কয়েক দিনে জোশীমঠের ৭৩১টিরও বেশি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। চওড়া চওড়া ফাটল দেখা গিয়েছে সেই শহরের রাস্তা-মন্দির-জমিতে। আতঙ্কেই রাতারাতি ভিটেমাটি ছাড়া সেই শহরের বহু মানুষ। ঠাঁই হয়েছে আশ্রয় শিবিরে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৩১টি পরিবারকে ত্রাণ শিবিরে পাঠানো হয়েছে। জোশীমঠকে ‘বসবাসের অযোগ্য’ বলেও ঘোষণা করেছে উত্তরাখণ্ড সরকার। তার মধ্যেই কর্ণপ্রয়াগেও একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরার ঘটনা প্রকাশ্যে এল। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তা হলে কি জোশীমঠের মতো কর্ণপ্রয়াগও তলিয়ে যাওয়ার পথে। আশঙ্কা তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যেও? জোশীমঠের বাসিন্দাদের মতো তাঁদেরও রাতারাতি ভিটেছাড়া হতে হবে কি না তা নিয়েও আশঙ্কায় স্থানীয়রা।