জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স।
ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পপন্থীদের তাণ্ডব এক দিকে যেমন আন্তর্জাতিক স্তরে আমেরিকার মুখ পোড়াল, পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে (বিশেষ করে চিন) তাদের কূটনৈতিক দর কষাকষির জায়গা কিছুটা ক্ষুণ্ণ হল বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা। ভবিষ্যতেও নানা বিষয়ে বাইডেন সরকারকে এমন সংঘাতের মুখে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
সূত্রের মতে, অতীতেও গণউন্মাদনা এবং পেশি প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করার সুযোগ ছাড়েননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে রিপাবলিকানদের যে সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে অভিষিক্ত করা হয় ট্রাম্পকে, সেখানেও মারমুখী মেজাজ দেখা গিয়েছিল সমর্থকদের। আওয়াজ উঠেছিল ‘লক হার আপ!’ নিশানায় ছিলেন তখনকার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন। খোদ রিপাবলিকান নেতা টেড ক্রুজ়-কেও বিশেষ নিরাপত্তা নিয়ে ওই সম্মেলন ছাড়তে হয়েছিল, কারণ তিনি ট্রাম্পের সুরে সুর মেলাননি। ক্রুজ় নিজেও ছিলেন এক জন সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী।
কূটনীতিকদের মতে, গণতন্ত্রের ঝাঁ চকচকে ভবন হিসাবে বিশ্বের সামনে প্রদর্শিত হওয়া ক্যাপিটল বিল্ডিং-এ যা হল, তাতে আমেরিকার ‘সফট পাওয়ার’ নিঃসন্দেহে ধাক্কা খেয়েছে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২০-র ভোটে বেশি মানুষ ভোট দিয়েছেন ট্রাম্পকে। তাঁর সমর্থকদের মধ্যে রয়েছে বণবিদ্বেষী একটা বড় অংশ, যাঁরা মনে করেন ঠান্ডা যুদ্ধের পরে সমাজ ও অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের লাভের গুড়ে ভাগ বসেছে। বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গদের অভিবাসন সংক্রান্ত গোঁড়া মনোভাবকে ট্রাম্প এত বছর লালন করেছেন। সেই
সমর্থন এখনও অটুট। একশোরও বেশি রিপাবলিকান সাংসদ গত নভেম্বরের ভোটকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে গিয়েছেন। সব মিলিয়ে ট্রাম্প মুখে যতই বলুন ক্ষমতার হস্তান্তর যাতে মসৃণ হয় সেটাই তিনি চান, কিন্তু ভবিষ্যতেও বার বার সংঘাতের সম্ভাবনা তাই উড়িয়ে দিচ্ছেন না কূটনীতিকেরা। ফলে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষে কাজটা সহজ হবে না। বাইরের দেশের সঙ্গেও চাপের কূটনীতির ক্ষেত্রে তাঁকে বার বার বাধাপ্রাপ্ত হতে হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। অতিমারি, বর্ণবিদ্বেষ, অর্থনীতি এবং উষ্ণায়নকে তিনি তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার হিসাবে ঘোষণা করেছেন। প্রত্যেকটির রূপায়ণের ক্ষেত্রেই দ্বিদলীয় সমর্থন প্রয়োজন হবে বাইডেনের। তা ছাড়া বাইডেনের নিজের দেশের গণতন্ত্রের হাল নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠবে আন্তর্জাতিক স্তরে।
ঘরোয়া রাজনীতিতে হাত বাঁধা বাইডেন এখন তাই চিনের সামরিক, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি কী ভাবে হন, সে দিকেই নজর রাখবেন বিশেষজ্ঞরা। ২০০১ এবং ২০০৯-এ আমেরিকার নৌ এবং বিমান বাহিনীকে পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছিল বেজিং। এ বার ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, দক্ষিণ চিনা সাগর, হংকং বা তাইওয়ানে চিনের হস্তক্ষেপের সঙ্গে বাইডেনকে যুঝতে প্রয়োজন অকুণ্ঠ ঘরোয়া সমর্থনের। গত কালের তাণ্ডব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, সেই সমর্থন ঝুলিতে ভরা খুব সহজ হবে না আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্টের পক্ষে।