হামলার প্রতিবাদে দিল্লি পুলিশের হেডকোয়ার্টারে ছাত্র জমায়েত।—ছবি টুইটার।
দিল্লির জেএনইউ-তে রবিবার হামলার ঘটনায় দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে ছাত্রসমাজ থেকে বুদ্ধিজীবী সকলেই সরব হয়েছেন। প্রতিবাদে শামিল হয়েছে বম্বে আইআইটি, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন বিক্ষোভ মিছিলও বার করেন যাদবপুর, পুণে এফটিটিআই-এর পড়ুয়ারা।
রবিবার সন্ধ্যায় মুখোশ পরা এক দল দুষ্কৃতী হামলা চালায় জেএনইউ-এর পড়ুয়াদের উপর। বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ ওঠে। হামলার অভিযোগ উঠেছে এবিভিপি-র বিরুদ্ধে। যদিও সেই অভিযোগকে সরাসরি খারিজ করেছে তারা। পড়ুয়াদের উপর এমন হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি-সহ বিরোধী দলগুলো।
হামলার কড়া নিন্দা করেছে বিজেপিও। দলের তরফে এ দিন রাতে টুইট করে বলা হয়, “এক দল নৈরাজ্যবাদী এই ঘটনা ঘটিয়েছে। নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বজায় রাখতে এই কাজ করেছে একদল দুষ্কৃতী। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি শিক্ষার পীঠস্থান, তেমনই থাকা উচিত।
রাতে জেএনইউ কর্তৃপক্ষের তরফে বিবৃতি জারি করে বলে হয়, “ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকে হামলা চালানো হয়েছে। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। ক্যাম্পাসের ভিতরে যো কোনও রকমের হিংসার কড়া নিন্দা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আহত পড়ুয়াদের জন্য ব্যথিত।”
পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে দিল্লি পুলিশকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বাইজাল। তিনি বলেন, “পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের উপর এই হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি। পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।”
হামলার প্রতিবাদে পুণে ফিল্ম ইননস্টিটিউটের পড়ুয়ারা।
দিল্লির পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে জেএনইউ-র হামলা নিয়ে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। দ্রুত পদক্ষেপ করতে বলেছেন তিনি। জয়েন্ট সিপি পর্যায়ের আধিকারিকদের দিয়ে তদন্তে নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব গোটা ঘটনার রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকও এই হামলার নিন্দা করেছে। টুইট করে মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়, “এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং নিন্দনীয় ঘটনা। এ ধরনের নৈরাজ্য ও হিংসা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।”
হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। তিনি বলেন, “জেএনইউ-র পড়ুয়া ও শিক্ষকদের উপর মুখোশধারী দুষ্কৃতীদের হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়। অনেকেই গুরুতর জখম হয়েছেন। ফ্যাসিস্টদের নিয়ন্ত্রণে চলছে দেশ। সাহসী পড়ুয়ারা সরব হওয়ায় ভয় পেয়ে গিয়েছে তারা। আজ জেএনএউ-এ হিংসা সেই ভয়েরই প্রতিফলন।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের প্রতিবাদ মিছিল। নিজস্ব চিত্র।
আহত পড়ুয়াদের দেখতে এইমস-এ ছুটে যান কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। তিনি বলেন, “আহত পড়ুয়ারা আমাকে জানিয়েছন, ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকে রড, লাঠি নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। অনেকেই আহত হয়েছেন। এই হামলার কড়া নিন্দা করছি।”
পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “এটা অত্যন্ত জঘন্য কাজ। গণতন্ত্রের লজ্জা।” জেএনইউ-এর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এবং পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে ইতিমধ্যেই সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীর নেতৃত্বে তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
হামলার নিন্দা করেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও। জয়শঙ্কর বলেন, “জেএনইউ-এর ঘটনার ছবি দেখেছি। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিরোধী।” অন্য দিকে সীতারামন বলেন, “ভয়ানক। যে বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি তর্ক আর মত বিনিময়ের স্থান হিসেবে চিনি সেখানে এমন ঘটনা ভাবা যায় না।”
নোবেলজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী বলেন, “জেএনএউ-এর পড়ুয়াদের উপর মুখোশধারী দুষ্কৃতীদের হামলা অত্যন্ত লজ্জার। জেএনইউ এবং জামিয়ার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলগুলোতে আমাদের মেয়েরা যদি সুরক্ষিত না থাকে সেটা খুবই লজ্জার। যাঁরা এই হা৩মলা চালিয়েছে তাঁরা ছাত্র হতে পারেন না। সমস্ত ছাত্র সংগঠনের একত্রিত হয়ে এই হামলার প্রতিবাদ করা উচিত।” এই হামলার নিন্দা করেছেন অপর্ণা সেনও।
অন্য দিকে, আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরীবাল বলেন, “জেএনএউ-এর হামলায় স্তম্ভিত। পড়ুয়াদের নির্মম ভাবে মারা হয়েছে। পুলিশের এখনই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভিতরে যদি ছাত্ররা সুরক্ষিত না থাকে, তা হলে দেশ এগোবে কী করে?”