রাহুল গাঁধী, মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় ও অরবিন্দ কেজরীবাল।
আগামী ১৩ তারিখ নয়াদিল্লিতে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় জাতীয় মঞ্চে একজোট হওয়ার প্রস্তুতি চলছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির। কিন্তু জেএনইউয়ে হামলার ঘটনা আজ সন্ধে থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে এককাট্টা করে দিল।
এই পরিস্থিতিতে জেএনইউয়ের হামলার ঘটনা থেকে নিজেদের দূরত্ব বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে বিজেপি। দলের পক্ষ থেকেও যেমন জেএনইউয়ের ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে, তেমনি জেএনইউয়ের হিংসার ঘোর নিন্দা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রাক্তনী বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লি পুলিশ কমিনারের সঙ্গে কথা বলেছেন। পুলিশের থেকে রিপোর্ট চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়নও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের থেকে গোটা ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছে।
ঘটনার পর থেকেই একের পর এক প্রতিক্রিয়া এসেছে তৃণমূল, কংগ্রেস, বাম শিবির থেকে। রাতেই জেএনইউয়ের আহত শিক্ষিকা ও পড়ুয়াদের দেখতে এমস পৌঁছন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে পড়ুয়াদের উপর হামলার কড়া নিন্দা করে জানিয়েছেন, দীনেশ ত্রিবেদীর নেতৃত্বে চারজনের প্রতিনিধি দল রওনা হয়ে গিয়েছে রাজধানীর উদ্দেশ্যে। রাহুল গাঁধীর টুইট, ‘‘জেএনইউয়ের ছাত্র এবং শিক্ষকদের উপর মুখ ঢাকা গুন্ডাদের বর্বরোচিত হামলার ঘটনা মারাত্মক। ফ্যাসিস্টরা আমাদের দেশের দখল নিয়েছে। সাহসী ছাত্রদের কন্ঠস্বরে তারা ভীত। হিংসার ঘটনায় সেই ভয়েরই প্রতিফলন।’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এবং জেএনইউ-র প্রাক্তনী সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, ‘‘এটা ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের সুপরিকল্পিত আক্রমণ। তাদের হিন্দুত্বের কর্মসূচির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো জেএনইউয়ের ছাত্রদের ওরা ভয় পেয়েছে। আইনের রক্ষকদের নাকের ডগা দিয়ে মুখোশ পরা গুন্ডারা জেএনইউয়ে ঢোকে। ভিডিয়ো থেকেই প্রমাণ, আরএসএস-বিজেপি দেশকে কোথায় নিয়ে চলেছে।’’ ক্ষোভ জানিয়েছেন তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, ‘‘জেএনইউয়ে
দেশের বৃহত্তম গণতন্ত্রের সামাজিক এবং নাগরিক স্বাধীনতার চরম মর্যাদাহানি ঘটল।’’
সরকারের দুই শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীও ক্ষোভ জানিয়েছেন একই সুরে। বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের কথায়, ‘‘জেএনইউয়ে যা ঘটেছে, তার ছবি দেখেছি। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করছি। এই ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সম্পূর্ণ বিরোধী।’’ অন্য মন্ত্রী নির্মলার কথায়, ‘‘জেএনইউয়ের আজকের ছবি ভয়াবহ। যে বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি জানতাম, তা তীব্র বিতর্ক এবং মতামতের জায়গা
ছিল, হিংসার নয়। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আজকের ঘটনার নিন্দা করছি। গত কয়েক সপ্তাহে যা-ই বলা হয়ে থাক, এই সরকার চায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের জন্য মুক্ত পরিসর থাকুক।’’
বিরোধীদের দাবি, নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি নিয়ে বিরোধিতা করে এসেছে জেএনইউ ছাত্র সংসদ। সেটাই হামলার অন্যতম কারণ। আজ সকালেই বিজেপির বুথ সম্মেলনে অমিত শাহ জানতে চেয়েছেন, টুকড়ে টুকড়ে গ্যাংকে জেলে পাঠিয়ে ঠিক করেছেন কি না। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা বলেছেন, যাঁরা সিএএ-র বিরোধিতা করছেন, তাঁদের কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সরকার ও মানুষ সেটা ভালই জানে। সঙ্ঘের নেতাদের এই ধরনের মন্তব্যের পরেই জেএনইউয়ে তাণ্ডব দেখল দেশ।
ফেডারেশন অব সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ফেডকুটা) জানিয়েছে, জেএনইউয়ের উপাচার্য ও তাঁর অনুগতেরা পরিকল্পনা করে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। উপাচার্যের অপসারণও দাবি করেছেন তাঁরা। আলিগড় সোসাইটি অব হিস্ট্রি অ্যান্ড আর্কিওলজি ঘটনার নিন্দা করে বলেছে, আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় ও জামিয়ায় একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের উপরে হামলা হয়েছিল। জেএনইউয়ে যারা ফ্যাসিস্ট ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির বিরোধিতা করেছেন তাঁদেরই মারা হয়েছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই এবিভিপি পাল্টা দাবি করেছে, জেএনইউয়ে আক্রান্ত হয়েছে তারাই। এসএফআই, আইসা ও ডিএলএফের ছাত্ররা মুখোশ পরে তাদের উপর প্রথমে আক্রমণ চালিয়েছে। তাদের ২৫ জন সদস্য গুরুতর আহত হয়েছে, ১১ জনের খোঁজ মিলছে না।