ছবি: পিটিআই।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) পড়ুয়াদের উপর পুলিশের লাঠি চালানোর প্রতিবাদে অচল হল সংসদ। তবে বিরোধী দলগুলির প্রতিবাদকে উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দু’টি এফআইআর করেছে দিল্লি পুলিশ। আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দিনভর বিষোদ্গার চালিয়ে গিয়েছেন। মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ অভিযোগ এনেছেন, জেএনইউকে শহুরে নকশালদের ডেরায় পরিণত করার চক্রান্ত হচ্ছে। আবার বিজেপি মুখপাত্রের দাবি, নার্সারিতে ভর্তির জন্য লক্ষ টাকা দিতে যাঁদের অসুবিধা নেই, উচ্চ শিক্ষার জন্য ৫০ হাজার টাকা দিতেই সমস্যা হচ্ছে তাঁদের।
জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের তরফে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের বিক্ষোভ আটকাতে পুলিশ শুধু লাঠিই চালায়নি, পুরুষ পুলিশ কর্মীদের হাতে হেনস্থা হতে হয়েছে মহিলা বিক্ষোভকারীদের। সাংবাদিক বৈঠকে ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশ যে ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে, তা লজ্জাজনক। মহিলা অফিসারেরা উপস্থিত থাকলেও পুরুষ পুলিশ অফিসারেরা আমাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন।’’ শীর্ষস্থানীয় পুলিশ অফিসারেরা অবশ্য বলপ্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, গত কালের ঘটনায় ১৫ জন পড়ুয়ার সঙ্গে ৩০ জন পুলিশকর্মীও আহত হয়েছেন। দিল্লির কৃষ্ণনগর এবং লোধি কলোনি থানায় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে পুলিশ। ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ (দক্ষিণ) অতুলকুমার ঠাকুর জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা বাধানো, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি, সরকারি কর্মীদের কাজে বাধা দেওয়া এবং অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ, সরকারি কর্মীদের উপর আঘাত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ যাতে পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেয়, সে জন্য মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কর্তাদের অনুরোধ করেছেন ছাত্র সংসদের নেতারা। তবে এরই মধ্যে দিল্লির পুলিশ কমিশনার ও জেএনইউয়ের ১১ জন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে দিল্লি হাইকোর্টে গিয়েছেন জেএনইউ কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, ক্যাম্পাসের ১০০ মিটারের মধ্যে বিক্ষোভ না দেখাতে হাইকোর্টের নির্দেশকে অমান্য করেছেন পড়ুয়ারা। আর এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের অভিযোগের পরেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
হস্টেলের বর্ধিত ফি পুরোপুরি ভাবে কমানো না হলে প্রতিবাদ চলবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে ছাত্র সংসদ। তবে তাদের কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি মুখপাত্র ও রাজ্যসভার সাংসদ জিভিএল নরসিংহ রাও। জেএনইউয়ের হস্টেল ফি বাড়ানোকে সমর্থন করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এর বিরোধিতা তাঁরাই করছেন, যাঁদের বাচ্চাদের স্কুলে এক লক্ষ টাকা ফি দিতে অসুবিধা নেই, অথচ উচ্চশিক্ষার জন্য ৫০ হাজার টাকা দিতেই অসুবিধা।’’ সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম পাল্টা বলেন, ‘‘শিক্ষা সেস বসিয়ে বিজেপি সরকার ২.১৮ লক্ষ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে, যা অব্যবহৃতই রয়েছে। অথচ সরকারের দাবি, জেএনইউয়ের ফি ও হস্টেলের খরচের জন্য তাদের কাছে কোনও টাকা নেই।’’
আরও পড়ুন: ‘সারা জীবন সংস্কৃত পড়েছি, কখনও মনে হয়নি আমি মুসলিম, বলছেন ফিরোজ খান
পড়ুয়াদের উপর পুলিশের লাঠি চালানো নিয়ে আজ উত্তপ্ত হয়েছে সংসদ। নরেন্দ্র মোদী সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। আপ নেতা সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘আইনজীবীরা আক্রমণ করায় তাঁদের পোশাকে দাগ লেগেছিল বলে অভিযোগ করেছিল দিল্লি পুলিশ। অথচ অসহায় এমনকি প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের উপর লাঠি চালিয়ে পুলিশের ইউনিফর্ম কলঙ্কিত হয়নি?’’ তর্কবিতর্কের জেরে দুপুর পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায় অধিবেশন। একই বিষয় নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছে লোকসভাও। পড়ুয়াদের উপর লাঠি চালানোর নিন্দা করে সৌগত রায় বলেন, ‘‘জেএনইউ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি। গোটা দেশ থেকে পড়ুয়ারা এখানে আসেন। দরিদ্র পরিবার থেকেও আসেন অনেকে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ টিউশন আর হস্টেল ফি বাড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ সরকারি খরচেই উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করার কথা।’’