উপাচার্য মামিডালা জগদীশ কুমার। ছবি: টুইটার।
মুখে কাপড় বাঁধা দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে রবিবার রক্ত ঝরেছে ক্যাম্পাসে। আহত বহু পড়ুয়া। কিন্তু তার জন্য সমবেদনা তো দূর, উল্টে ছাত্র আন্দোলনকেই এই অভূতপূর্ব হিংসার জন্য দায়ী করেছেন তিনি। এর আগে ফি বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবিতে টানা আন্দোলনের সময়েও বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখাননি আলোচনার টেবিলে বসতে। রক্তাক্ত রবিবারের চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে তাই পড়ুয়া থেকে শিক্ষক— সকলের ক্ষোভর উপাচার্য মামিডালা জগদীশ কুমারের দিকে। তাঁদের বড় অংশের দাবি, এই ঘটনার দায় নিয়ে পদত্যাগ করুন তিনি।
জেএনইউয়ের শিক্ষক সংগঠনের তরফে সুরজিৎ মজুমদারের অভিযোগ, ‘‘গত দু’মাসেরও বেশি আন্দোলন চলাকালীন আমরা বলে আসছি, সমস্যা সমাধানের কোনও আগ্রহ ওঁর নেই। নেই পড়ুয়াদের মন বোঝার ক্ষমতাও। এখন মার খাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদেরই কাঠগড়ায় তুলছেন তিনি। রবিবারের ঘটনার পরে সামান্যতম লজ্জা থাকলে, ওঁর অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’’
জেএনইউএসইউয়ের প্রেসিডেন্ট এবং রবিবারের হামলায় আহত ঐশী ঘোষেরও এ দিন স্পষ্ট দাবি, উপাচার্যের মদতেই অরাজকতা চলছে ক্যাম্পাসে। তাই হয় তিনি দ্রুত পদত্যাগ করুন, নয়তো তাঁকে সরানোর জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন পড়ুয়ারা।
উপাচার্যের পদত্যাগের এই দাবি নতুন নয়। পড়ুয়াদের দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক আন্দোলনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে অন্তত আলোচনার টেবিলে বসেছে। কিন্তু উপাচার্য বসেননি। অধ্যাপকদের অভিযোগ, জেএনইউয়ের শিক্ষার মান শিকেয় তুলে সঙ্ঘ-ঘেঁষা শিক্ষক নেওয়ার রাস্তা খুলে দিতে নিয়োগের নিয়মে বদল করেছেন তিনি। যা আসলে দুর্নীতির শামিল। ক্যাম্পাসে অনেকেরই বক্তব্য, বাম ঘাঁটি বলে পরিচিত জেএনইউয়ে সঙ্ঘের প্রভাব বাড়াতে বুঝেশুনেই আইআইটি-দিল্লির এই প্রাক্তন অধ্যাপককে উপাচার্য পদে পাঠিয়েছে মোদী সরকার। যে কারণে পড়ুয়াদের যাবতীয় দাবিকে দুরমুশ করার নীতি আঁকড়ে ধরে আছেন তিনিও। ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের মার খাওয়ার পরে সোমবারও নিজের টুইটে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। কার্যত তাঁর এবং রেজিস্ট্রারের বক্তব্যের সঙ্গে এক সুরে বেজেছে পুলিশ এবং এবিভিপি-র বয়ান।
সোমবার পড়ুয়াদের প্রশ্ন, ক্যাম্পাসে এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে উপাচার্য কোথায়? কেন এক বারও মার খাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করলেন না তিনি? পড়ুয়াদের নিরাপত্তা দিতে না পারার দায় নিয়ে আজই পদত্যাগ করেছেন সবরমতী হস্টেলের সিনিয়র ওয়ার্ডেন আর মীনা।