অমিতাভ বচ্চন। ফাইল চিত্র।
রাত সওয়া একটা। টিভির পর্দায় ঐশী ঘোষের রক্তাক্ত মুখ। কিছু ক্ষণ আগেই দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এ ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে এবিভিপি বাহিনী। হঠাৎ টুইট অমিতাভ বচ্চনের। উদ্গ্রীব তাঁর ৩ কোটি ৯৭ লক্ষ ফলোয়ার। তা হলে কি মুখ খুললেন গুজরাতের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর?
৩৬০২ নম্বর টুইটে (অমিতাভ নিজেই তাঁর প্রতিটি টুইটের আগে নম্বর বসিয়ে দেন) শুধু একটি ‘ইমোজি’। জোড় হাতের। সাধারণত যা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বা ক্ষমা চাইতে ব্যবহার করেন নেটিজ়েনরা। কিন্তু ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকারা যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আক্রান্ত, যখন অমিতাভের শহরেই গেটওয়ে অব ইন্ডিয়ার সামনে জেএনইউয়ে তাণ্ডবের প্রতিবাদে জড়ো হয়েছেন পড়ুয়ারা, তখন এই ‘রহস্যময়’ টুইটের অর্থ কী?
উত্তর না-পাওয়া গেলেও এই টুইট এবং সংশ্লিষ্ট ‘নীরবতার’ জন্য সারা দিন সমালোচিত হয়েছেন দাদাসাহেব ফালকে-জয়ী অভিনেতা। অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘আপনার যে রাগ সিনেমার পর্দায় দেখি, তা কি নিছকই অভিনয়? বাস্তবে কি কোনও প্রতিফলন থাকবে না? আপনি কি আক্রান্ত পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াবেন না?’’ অনেকের প্রশ্ন, ‘‘কার হয়ে মার্জনা চাইছেন আপনি? আপনি তো প্রতিবাদ করতে পারেন। কারণ আপনি অমিতাভ বচ্চন। আপনাকে কেউ কিছু বলবে না!’’ আর এক জনের মন্তব্য— ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার দেশকে লাটে তোলার চেষ্টা করছে। তাই দেশকে বাঁচানোর জন্য প্রার্থনা করছেন? পরের বার শুধু নীরব প্রার্থনা নয়, মুখেও কিছু বলবেন।’’
হামলার প্রতিবাদে পড়ুয়াদের পাশে অনুরাগ কাশ্যপ, দিয়া মির্জা,
তাপসী পান্নুর মতো বলিউড তারকারা। ছবি সৌজন্য টুইটার।
অমিতাভ চুপ থাকলেও বলিউডের বেশির ভাগ তারকাই আজ জেএনইউয়ে গেরুয়া তাণ্ডবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। অনিল কপূর, আলিয়া ভট্ট, রাজকুমার রাও, টুইঙ্কল খন্না-সহ এক ঝাঁক তারকা কাল রাতের ঘটনা সম্পর্কে ‘ভয়াবহ’, ‘হৃদয়বিদারক’, ‘বর্বর’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করেছেন। মুম্বইয়ে নিজের ছবির ট্রেলর মুক্তির অনুষ্ঠানে অনিল কপূর বলেন, ‘‘যা দেখলাম, তা খুবই দুশ্চিন্তার।’’ তাঁর মেয়ে, অভিনেত্রী সোনম কপূর টুইটারে লেখেন, ‘‘কী ভিতু এই আক্রমণকারীরা। নিরপরাধ ছেলেমেয়েগুলোর উপরে মুখ বেঁধে হামলা চালাল!’’ পরিচালক জ়োয়া আখতারের কথায়, ‘‘এখনও নিজেকে অরাজনৈতিক বলছেন? তা হলে বলতেই হবে, আপনি কাপুরুষ!’’ আলিয়া ভট্ট ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন, ‘‘আমাদের মতাদর্শ আলাদা হতে পারে। কিন্তু দেশবাসী হিসেবে আমাদের একসঙ্গে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’’ টুইঙ্কল খন্নার টুইট, ‘‘এ দেশে পড়ুয়াদের থেকে গরুরা বেশি নিরাপদে থাকে।’’ তবে এই টুইটের জন্য যথেষ্ট সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় তাঁকে। এবিভিপি-র ঘোষিত সমর্থক, টুইঙ্কলের স্বামী অক্ষয় কুমারের এবিভিপি-র পতাকা হাতে ছবি পোস্ট করে অনেকেই বলেন, ‘‘আপনার স্বামীকে একটু বুঝিয়ে বলুন!’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব বলিউড ব্যক্তিত্বদের মধ্যে সব থেকে চাঁচাছোলা ছিলেন পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ। কাল সন্ধেবেলা জেএনইউয়ে হামলার পরেই তিনি হিন্দিতে টুইট করেন, ‘‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে।’’ তার মিনিটখানেক পরেই দ্বিতীয় টুইট— ‘‘এখন আর বলতে লজ্জা নেই— অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী, তোমরা, তোমাদের বিজেপি ও এবিভিপি, সকলেই সন্ত্রাসবাদী।’’ টুইটে বিজেপি সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে ‘ট্যাগ’ও করেছেন অনুরাগ। এ দিন মুম্বইয়ের কার্টার রোডে এক সমাবেশেও অংশ নেন অনুরাগ, বিশাল ভরদ্বাজ, জোয়া আখতার, তাপসী পন্নু প্রমুখ।
ঠিক এক বছর আগে বলিউডের তারকাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এক বৈঠক হয়েছিল। সে দিন রণবীর সিংহ থেকে রণবীর কপূর, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তোলা নিজস্বীতে ছিল তামাম বলিউড। তবে গতকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযুষ গয়ালের সিএএ নিয়ে ডাকা বৈঠকে রণবীর সোরে-র মতো হাতে গোনা কয়েক জন ছাড়া কেউ যাননি।