জেএনইউ-র পড়ুয়াদের পাশে দীপিকা পাড়ুকোন। ছবি সৌজন্য টুইটার।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়ালেন দীপিকা পাড়ুকোন। সঙ্গে সঙ্গেই সোশ্যাল মিডিয়ার শুরু হয়ে গেল আক্রমণ!
ক্যাম্পাসে সাবরমতী হস্টেলের বাইরে টি পয়েন্টে আজ সন্ধেয় জেএনইউ প্রাক্তনী এবং শিক্ষক সংগঠনের প্রতিবাদসভা ছিল। ছাত্র সংসদের আহত নেত্রী ঐশী ঘোষ-সহ প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীরাও ছিলেন। ছিলেন কানহাইয়া কুমার। কানহাইয়া যখন আজাদির স্লোগান তুলছিলেন, তাঁদের সকলের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন দীপিকা। সাড়ে সাতটা নাগাদ ক্যাম্পাসে পৌঁছে ঐশীকে নমস্কার জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি কোনও বক্তৃতা করবেন না। শুধু ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকার বার্তা দিতেই এসেছেন। পরে ঐশীর ফেসবুক পেজে সেই ছবি দিয়ে লেখা হয়, ‘প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলুন।’
গত কাল থেকে দিল্লিতে রয়েছেন দীপিকা। এক অ্যাসিড-আক্রান্ত তরুণীর ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই নিয়ে নতুন ছবির প্রচারেই তিনি এসেছেন। কাল রাতেই একটি চ্যানেলকে বলেছিলেন, ‘‘মানুষ যে নির্ভয়ে বেরিয়ে এসে নিজের মত প্রকাশ করছেন, সেটা খুব ইতিবাচক।’’
এনআরসি-সিএএ এবং জামিয়া-জেএনইউয়ের পড়ুয়াদের উপরে আক্রমণের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঢল নেমেছে। এবং একটা দীর্ঘ সময় পরে বলিউডের বেশ কয়েক জন ধীরে ধীরে সরব হতে শুরু করেছেন। অনুরাগ কাশ্যপ-স্বরা ভাস্করের মতো বরাবরের প্রতিবাদী মুখগুলোর বাইরেও আরও অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলছেন। আলিয়া ভট্ট, তাপসী পন্নু, রাজকুমার রাও, আয়ুষ্মান খুরানা, হৃতিক রোশন, অজয় দেবগন, অনিল কপূররা ছাত্রপীড়নের নিন্দা করেছেন। মুম্বইয়ে একের পর এক প্রতিবাদ সমাবেশে উপচে পড়েছে ভিড়। কয়েক মাস আগে গোটা বলিউড প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিজস্বী তুলতে একজোট হলেও রবিবার পীযূষ গয়ালের আমন্ত্রণ দৃশ্যত ফ্লপ করেছে। আর যে দীপিকার স্বামী রণবীর সিংহ প্রধানমন্ত্রীকে ‘জাদু কি ঝাপ্পি’ দিয়েছিলেন, সেই দীপিকা আজ প্রতিবাদসভায় যোগ দিয়েছেন।
গেরুয়া শিবির থেকে পাল্টা আক্রমণ অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছে। দিল্লি বিজেপির মুখপাত্র তেজিন্দার পাল সিংহ বগ্গা ইতিমধ্যে ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’-এর সমর্থনে দাঁড়ানোর ‘অপরাধে’ দীপিকার সমস্ত ছবি বয়কট করার ডাক দিয়েছেন। টুইটারে বিজেপির নেতা-কর্মীরা সমস্বরে তাতে গলা মিলিয়েছেন। দেশে ট্রেন্ডিংয়ে এক নম্বরে ‘বয়কটছপাক’, দু’নম্বরে ‘আইসাপোর্টদীপিকা’। বেশ কয়েক বছর আগে একবার দিল্লিতেই ছবির প্রচারে এসে আমির খান নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের ধর্না সমাবেশে উপস্থিত হয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। মোদী সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে এখনও অবশ্য তিন খানের কাউকেই মুখ খুলতে দেখা যায়নি।
দীপিকা এর আগে ‘পদ্মাবত’ ছবি ঘিরে করণী সেনার রোষে পড়েছিলেন। তাঁর নাক কেটে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাঁর ছবি বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছিল সে বারও। এ বারের বয়কট আহ্বান নিয়ে দীপিকা কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও জানাননি। তবে দেশে প্রতিবাদের চলতি আবহকে কেন্দ্র করে কাল রাতে তাঁর বক্তব্য ছিল স্পষ্ট— ‘‘আমার এটা দেখে খুব গর্ব হচ্ছে, মানুষ আর নিজের মতামত জানাতে ভয় পাচ্ছেন না। যাঁর মত যেমনই হোক, সকলে যে দেশকে নিয়ে ভাবছেন, দেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করছেন, সেটা খুব বড় কথা। মতামতগুলো স্পষ্ট করে না বললে তো কোনও পরিবর্তন আসবে না।’’