অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়
নাৎসি যুগের দিকে এগিয়ে যাওয়া জার্মানির সঙ্গে বর্তমান ভারতের খুবই মিল রয়েছে বলে মনে করছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার একটি টিভি চ্যানেলকে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, বিশ্বের দরবারে ভারতের ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তিত যে কোনও ভারতীয়ই উদ্বিগ্ন বোধ করছেন। বর্তমান ভারতের সঙ্গে নাৎসি শাসনের দিকে এগিয়ে চলা জার্মানির বড্ড বেশি মিল দেখা যাচ্ছে।’’ তাঁর মতে, ভারত বলতে যা বোঝায়, সেই ধারণাটিই আজ সঙ্কটের মুখে। আনন্দবাজারকে অভিজিৎ বলেন, দেশে ভিন্ন মতের পরিসর নষ্ট হওয়ার যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তা ‘ভারত নামক প্রকল্পটিকে বিপন্ন করে তোলে।’
রবিবার জেএনইউ ক্যাম্পাসে গুন্ডা বাহিনী তাণ্ডব চালায়। ছাত্রছাত্রী-শিক্ষক, প্রহৃত হন সকলেই। তার প্রেক্ষিতেই অভিজিতের এই মন্তব্য। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে তিনি বলেন, ‘‘কী ঘটেছে, সে ব্যাপারে সত্য উদ্ঘাটন করুক মোদী সরকার। দোষারোপ আর পাল্টা দোষারোপের কোরাসে সত্যটা যেন ডুবে না যায়।’’
অভিজিৎ জেএনইউ-এর প্রাক্তনী। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সতীর্থ।
নির্মলার রবিবােরর টুইট স্মরণ করিয়ে অভিজিৎ আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ভিন্নমতাবলম্বীদের পক্ষে জেএনইউ নিরাপদ জায়গা ছিল। কথাটা ঠিক। এক দিকে সীতারাম ইয়েচুরি, অন্য দিকে নির্মলা সীতারামন, দুই সম্পূর্ণ বিপরীত মতের মানুষ সেখান থেকে বেরোতে পারতেন।’’
কিন্তু এই মুহূর্তে ভারতের অবস্থা, জেএনইউ-এর অবস্থা দেখে স্বস্তিতে নেই অভিজিৎ। তাঁর কথায়, ‘‘এই পরিসরটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে— এটা আমাদের অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ।’’ অথচ ছাত্রছাত্রীদের হাতেই যে হেতু দেশের ভবিষ্যৎ, সে কারণে মুক্ত চিন্তার আবহকে বাঁচিয়ে রাখাটা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন তিনি। অভিজিৎ বলেছেন, ‘‘আজকের ছাত্রছাত্রীরা কাল নেতা বা নেত্রী হবে। দেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে তাদের মধ্যে এমন মানসিকতা তৈরি করা খুব জরুরি, যাতে তারা শোভন এবং ভদ্র ভাবে বহুত্বের মোকাবিলা করতে পারে, ভিন্ন মতের জবাব দিতে পারে বুদ্ধি দিয়ে, হিংসা দিয়ে নয়।’’