রড-লাঠির কথা কবুল করলেন এবিভিপি নেত্রী

অণিমার দাবি, বামপন্থী পড়ুয়াদের ‘লাগাতার আক্রমণের’ মুখে এবিভিপি-র সদস্য ও নেতারা ‘ভীত-সন্ত্রস্ত্র’ ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৫০
Share:

অণিমা সোনকর।

দিল্লি পুলিশ যাঁর অধীনে, সেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই দাবি করেছেন, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) রবিবারের তাণ্ডবে যুক্ত নন কোনও বিজেপি নেতা! অথচ এক টিভি চ্যানেলে সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র দিল্লি শাখার যুগ্ম সচিব অণিমা সোনকর স্বীকার করে ফেললেন, সে দিন এমনই ‘ভয়ের পরিবেশ’ তৈরি হয় যে, ‘আত্মরক্ষায়’ রড, লাঠি এমনকি, অ্যাসিড সঙ্গে রাখার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। নির্দেশও তেমনই ছিল।

Advertisement

হামলার তদন্ত করতে মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে গিয়েছিল দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা এবং ফরেন্সিক বিভাগ। অথচ ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার পরেও কাউকে গ্রেফতার তো দূরস্থান, চিহ্নিত করতেও ব্যর্থ পুলিশ-প্রশাসন। যা দেখে এ দিন পড়ুয়া, প্রাক্তনী এবং শিক্ষকদের বড় অংশের আশঙ্কা, এই তদন্ত নেহাতই মুখরক্ষার খাতিরে। নইলে সব ছেড়ে আগেভাগে মার খাওয়া পড়ুয়াদের নামেই এফআইআর দায়ের করা হবে কেন?

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবি দেখিয়ে অনেকের অভিযোগ, তাণ্ডব শুরুর আগে লাঠি হাতে যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জেএনইউয়ে এবিভিপি-র এগ্‌জিকিউটিভ কমিটির সদস্য বিকাশ পটেল, এবিভিপি-র আর এক সদস্য শিব পূজন মণ্ডল। টিভি চ্যানেলে তাঁদের নিয়ে প্রশ্নের মুখেই সঙ্গে অস্ত্র রাখার ফরমানের কথা কবুল করে ফেলেন অণিমা।

Advertisement

অণিমার দাবি, বামপন্থী পড়ুয়াদের ‘লাগাতার আক্রমণের’ মুখে এবিভিপি-র সদস্য ও নেতারা এত ‘ভীত-সন্ত্রস্ত্র’ ছিলেন যে, ঘর থেকে বাইরে বেরোলে সঙ্গে আত্মরক্ষার সরঞ্জাম রাখতে বলা হয়েছিল প্রত্যেককে। লাঠি, রড, গোলমরিচ গুঁড়োর স্প্রে, অ্যাসিড— যে যা হাতে পেয়েছেন, তা-ই সঙ্গে নিয়ে রেখেছিলেন বলে জানান তিনি। টিভি চ্যানেলে তিনি এ-ও মেনে নিয়েছেন যে, বিকাশ এবিভিপি-র কর্মী। বেফাঁস বলছেন বুঝতে পেরেই অবশ্য বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় লাঠি হাতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনিই বিকাশ কি না, তা নিশ্চিত করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। বলেন, কোনও হস্টেলে অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনাও তাঁর জানা নেই।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তার মানে কি রবিবার সশস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করছে এবিভিপি? আত্মরক্ষার জন্য হাতে অ্যাসিড নেওয়ার কথা কেউ কখনও শুনেছে কি?

শুধু তা-ই নয়, এবিভিপি-র এখন দাবি, রবিবার সকালে পেরিয়ার হস্টেলে জেএনইউএসইউ প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষের ‘নেতৃত্বে যে হামলা’ হয়েছিল, তার জেরে আহত হয়েছেন তাদের অন্তত ৭-৮ জন সদস্য। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির পাল্টা দাবি, ঐশীকে দেখার জন্য রবিবার রাতে এমসে ঢোকার সময়ে এবিভিপি সমর্থকদের কাছে বাধা পেতে হয় তাঁকে। তখন হাসপাতালে কিছু এবিভিপি সদস্যকে আহত বলে ঘোষণার জন্য ডাক্তারদের উপরে চাপ তৈরি করছিলেন বিজেপি নেত্রী তথা সাংসদ মীনাক্ষী লেখি। এমস তাতে মাথা না-ঝোঁকানোয় ডাক্তারদের ধন্যবাদ জানান তিনি। ইয়েচুরি, সিপিআই নেতা ডি রাজা থেকে শুরু করে জেএনইউএসইউয়ের প্রেসিডেন্ট ঐশী, ভাইস প্রেসিডেন্ট সাকেত মুন— সকলের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ, দিল্লি পুলিশ ও এবিভিপি-র মধ্যে যোগসাজশ না-থাকলে, এ ধরনের পরিকল্পিত আক্রমণ এবং তার পরে এমন মসৃণ ভাবে পালানো কখনও সম্ভব নয়। কর্তৃপক্ষের তরফে বিভিন্ন বয়ান সেই ধারণা আরও পোক্ত করেছে বলে দাবি।

যেমন অভিযোগ, ক্যাম্পাসে এত জন পড়ুয়া আহত হওয়ার পরে এক বারের জন্যও যে উপাচার্য মুখ খোলেননি, তিনি আজ শুধু ‘বাছাই করা’ সংবাদমাধ্যমের সামনে অতীত ভুলে ক্লাসে ফেরার ডাক দিয়েছেন। অথচ একই সঙ্গে ধর্মঘটী পড়ুয়াদের একাংশের নামে এফআইআর দায়ের করছে তাঁর প্রশাসন। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর চিন্তামণি মহাপাত্রের কথায়, ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের’ মতো ওই তাণ্ডব ঘটে গিয়েছে বলেই চট করে ধরা সম্ভব হয়নি কাউকে। রেজিস্ট্রার প্রমোদ কুমারও বলেছেন শুধুমাত্র সার্ভার রুম ভাঙার কথা।

সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদবের দাবি, রবিবার যাঁরা তাঁকে গেটের সামনে হেনস্থা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন সংস্কৃতের অধ্যাপক হরিরাম মিশ্রও। আগেও ওই ঘটনার দিনে সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ অধ্যাপকদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে এসেছে পড়ুয়াদের কথাতে। মীনাক্ষী বলে বসেছেন, সে দিন আসলে মুখে কাপড় বেঁধে এসেছিল জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার পড়ুয়ারাই। এ দিন যার তীব্র প্রতিবাদ করলেন জামিয়ার শিক্ষক সংগঠনের নেতা মজিদ জামিল। প্রশ্ন তুললেন, কী ভাবে কোনও তদন্ত ছাড়া এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করতে পারেন এক সাংসদ?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement