বহিষ্কৃত সিপিএম নেত্রী জগমতী সাঙ্গোয়ান।
ম্যারাথন যুদ্ধের পরে বঙ্গ সিপিএমের পথে শেষ পর্যন্ত বাধা হয়ে দাঁড়াল না কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু, যুদ্ধ করতে গিয়ে বলি হলেন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জগমতী সাঙ্গোয়ান।
দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির তিন দিনের বৈঠকে বিভিন্ন রাজ্য থেকে সংখ্যা গরিষ্ঠ সদস্যই বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করেছেন। কট্টরপন্থী কেউ কেউ আবার এমন দাবিও করেছেন যে, পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত এবং কেন্দ্রীয় কমিটির লাইন ভাঙার দায়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির বিরুদ্ধে নিদেন পক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। জোটের বিরোধিতায় এই সওয়াল করেত গিয়ে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিলেন জগমতী। প্রাক্তন জাতীয় ভলিবলার এবং হরিয়ানায় খাপ পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জগমতী কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আবেগমোথিত হয়ে সওয়াল করেন, বাংলা সিপিএমের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গোটা দলের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটা পার্টি লাইনের রাজনৈতিক কৌশল ভেঙেছে। কমিউনিস্ট পার্টি তার বৈশিষ্ট হারাতে বসেছে। দল হিসাবে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ধাক্কা খেয়েছে। আলিমুদ্দিনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হরিয়ানার জগমতী রাতারাতি দলের সব পদ থেকে তাঁর ইস্তফার কথা জানিয়ে দেন। আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে এবং সজল নয়নে জগমতীর এই প্রতিবাদ অবশ্য কড়া হাতে দমন করতে হয়েছে সিমিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। মীমাংসার রাস্তায় না হেঁটে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই তাঁকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঠিক যেমন করা হয়েছিল প্রসেনজিত্ বসুকে চার বছর আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়। এ দিন জগমতী বলেন, ‘‘পলিটব্যুরো এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের সময় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয়েছিল তা পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। আমি চেয়েছিলাম লেখা হোক, আলিমুদ্দিন দলের রাজনৈতিক লাইন ভেঙেছে। সেটা পলিটব্যুরো না মানার প্রতিবাদে পদত্যাগ করি।’’ বঙ্গ সিপিএমের শাস্তির দাবি তুলেছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘শাস্তি তো পরে! আগে তো লিখতে হবে, ওরা পার্টি লাইন ভেঙেছে। কিন্তু, সাধারণ সম্পাদক ও পলিটব্যুরো তা মানতে রাজি নয়।’’
সিপিএমের নিয়ম অনুযায়ী হঠাত্ করে চিঠি লিখে বা বিবৃতি দিয়ে সদস্য পদ ছাড়া যায় না। পদত্যাগপত্র প্রকাশ্যেও আনা যায় না। কেউ দলের সদস্য থাকতে না চাইলে, সদস্যপদের বাত্সরিক পুনর্নবিকরণ না করাতে পারেন। কিন্তু, জগমতী তা করেননি। তাই তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা। দলের পরিভাষায় যাকে বলা হচ্ছে ‘গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গ’।
এর আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউপিএ প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সিপিএম সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দলের সদস্যপদ ছেড়েছিলেন প্রসেনজিত্। পদত্যাগপত্র প্রকাশ্যে এনে তাঁকে বহিুষ্কৃত হতে হয়েছিল। সিপিএমের অন্দরে প্রসেনজিত্ ছিলেন প্রকাশ কারাট অনুগামী। চার বছর পরে সমাপতন এখানেই যে, জগমতীও দলের অন্দরে প্রকাশ জায়া বৃন্দার অনুগামী বলেই পরিচিত। এবং তাঁরও প্রতিবাদ সেই কংগ্রেসের সঙ্গে দহরম মহরমের বিরুদ্ধে! তফাত এটাই যে, ইউপিএ প্রার্থী প্রণববাবুকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সিপিএমের কাণ্ডারি ছিলেন কারাট। জগমতীর বহিষ্কারের সময় দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। যাঁর সওয়া এক বছরের কার্যকালে এটাই প্রথম প্রকাশ্যে বিদ্রোহ।
তিন দিনের বৈঠকে তুমুল বিরোধিতা হলেও, কেন্দ্রীয় কমিটি অবশ্য বাংলা সিপিএমের পথ রুদ্ধ করে দেয়নি। বাংলায় বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে যে ভাবে সমঝোতা হয়েছে, সেটা না হলেই ভাল হত বলে কেন্দ্রীয় কমিটি মনে করছে, তবে একেবারেই ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তারা মানছে।