কাঠের আঁচে হাঁড়ির উপরে হাঁড়ি বসিয়ে জগন্নাথদেবের ভোগ রান্নার মধ্যেও ভক্তেরা অলৌকিক মহিমা খুঁজে পান। জগন্নাথ মন্দিরে রসুইঘরের মতো পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন সিসি ক্যামেরার নজরদারি পুরোটা কার্যকর হবে না, দিনভর এই ক্ষোভ, শোকেই বিচলিত সাধারণ ভক্তেরা।
ফাইল চিত্র।
প্রভু জগন্নাথের মন্দিরে এমনটা ঘটতে পারে, তা নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না রসুইঘরের সেবায়েত সূয়ার, মহাসূয়ারেরা (সূপকার)। তবে পুরীর শ্রী মন্দিরে ভাঙা উনুনের তদন্তে দু’দিন বাদেও স্পষ্ট দিশা মেলেনি। সিসিটিভি-র ফুটেজে অপকর্মটি কারা ঘটিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। রাতের অন্ধকারে ভবঘুরে বা মানসিক ভাবে অসুস্থ কেউও এমনটা ভুল করে ঘটাতে পারেন, এমন আশঙ্কাই জোরালো হচ্ছে।
তবে যা-ই ঘটুক, মন্দিরের এই অনর্থে সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঢিলেঢালা চেহারাই প্রকট হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার নজরদারিও যথাযথ নয় বলে মনে করছেন ওড়িশা সরকার তথা মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটির প্রতিনিধিরা। গোটা ওড়িশা জুড়ে জগন্নাথদেবের মন্দিরে উনুন ভাঙার ঘটনায় ভক্তদের ক্ষোভে, শোকে বিচলিত হয়ে সোমবার ওড়িশার মুখ্য সচিব সুরেশ মহাপাত্র এবং ওড়িশা পুলিশের ডিজি সুনীল বনসল মন্দির পরিদর্শনে এসেছিলেন। কয়েকটি উনুন দ্রুত মেরামত করে নেন সেবায়েতরা। রসঘর তথা রসুইঘরের ২৪০টি উনুনের মধ্যে ১৮৯টিতে এখন ভোগ রান্না সম্পন্ন হচ্ছে।
রবিবার কম-বেশি ৬০-৭০টি উনুন ভাঙার বিষয়টি জানাজানির পরে অবশ্য প্রভুর সেবাকাজে কিছুটা দেরি হয়েছিল। মন্দিরের অন্যতম প্রতিহারী রঘুনাথ গোছিকর বলছিলেন, “ওই দিন ভোগ তৈরিতে ঘণ্টা দুয়েক দেরি হয়।” তবে সোমবার সেবায়েতদের তৎপরতায় জগন্নাথদেবের নিত্যসেবায় কোনও ফাঁক ছিল না। কিন্তু কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রভুর রান্নার উনুন ভেঙে কোনও বিঘ্ন ঘটাবে, তা ওড়িশার সাধারণ জনের তরফে বিশ্বাস করা শক্ত। মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য তথা প্রবীণ সেবায়েত রামচন্দ্র দয়িতা বলেন, “সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া ফুটেজে রাতে রসুইঘরের বাইরে কয়েক জনের নড়াচড়া স্পষ্ট। কিন্তু তারা কারা, তা স্পষ্ট নয়।” ওড়িশা সরকার এবং মন্দির প্রশাসন মিলে একযোগে তদন্ত করছে।
শ্রী মন্দিরের রসুইঘর সাধারণ ভক্তদের অগম্য। একমাত্র রথযাত্রার সময়ে জগন্নাথদেব গুন্ডিচা মন্দিরে অবস্থান করলে শ্রী বিগ্রহহীন মন্দিরে রসুইঘর দেখতে যেতে পারেন সাধারণ ভক্তেরা। রসুইঘরে কয়লা বা গ্যাসের ছোঁয়াচ বিধিসম্মত নয়। কাঠের আঁচে হাঁড়ির উপরে হাঁড়ি বসিয়ে জগন্নাথদেবের ভোগ রান্নার মধ্যেও ভক্তেরা অলৌকিক মহিমা খুঁজে পান। জগন্নাথ মন্দিরে রসুইঘরের মতো পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন সিসি ক্যামেরার নজরদারি পুরোটা কার্যকর হবে না, দিনভর এই ক্ষোভ, শোকেই বিচলিত সাধারণ ভক্তেরা।