LPG

LPG: গ্যাসে ভর্তুকি ভুলে যাওয়াই ভাল, ইঙ্গিত তেল সচিবের

দেশে এখনও পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বিপুল। কেন্দ্র উৎপাদন শুল্ক ছাঁটার পরেও। যে কারণে খাদ্য-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পণ্যের দামও চড়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২২ ০৬:০৪
Share:

কলকাতায় ভর্তুকি মাত্র ১৯.৫৭ টাকা ফাইল চিত্র।

রান্নার গ্যাসের দাম ক্রমাগত বাড়লেও, ভর্তুকি কোথাও শূন্য, কোথাও নামমাত্র (কলকাতায় মাত্র ১৯.৫৭ টাকা)। চাপের মুখে সম্প্রতি শুধু উজ্জ্বলার গরিব গ্রাহকদের সিলিন্ডারে (বছরে ১২টি) ২০০ টাকা ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র। ফলে দারিদ্র সীমার উপরে থাকা যে সমস্ত স্বল্প রোজগেরে সাধারণ মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরোচ্ছে, হাজার টাকার বেশি গুনতে গিয়ে তাঁরা বিপর্যস্ত। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের তরফে ভর্তুকি না দেওয়ার পক্ষেই সওয়াল করা হল। তেল মন্ত্রকের সচিব পঙ্কজ জৈন স্পষ্ট বললেন, রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি শুধু উজ্জ্বলা যোজনার গ্রাহকদের প্রাপ্য। বাকিদের বাজার দরেই সিলিন্ডার কিনতে হবে। ফলে দেশ জুড়ে দানা বাঁধল নতুন সংশয়, তা হলে কি হাতে গোনা কিছু জায়গায় এখন যে সামান্য ভর্তুকি মিলছে, এ মাস থেকে তা-ও বন্ধ হয়ে যাবে?

Advertisement

আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীর মন্তব্য, ‘‘বরাবরের জন্য ভর্তুকি চালু থাকবে এবং বাড়বে, ভর্তুকির সংজ্ঞা এমন নয়। সেই অনুযায়ী, তা আদতে ধাপে ধাপে কমে আসা উচিত।’’ জৈনের দাবি, ২০২০ সালের জুন থেকেই রান্নার গ্যাসের গ্রাহকদের আর কোনও ভর্তুকি দেওয়া হয় না। শুধু তা চালু উজ্জ্বলা যোজনার ক্ষেত্রে।

এ দিন পেট্রল-ডিজ়েল নিয়েও চিন্তা বেড়েছে তেলমন্ত্রীর কথায়। তিনি জানিয়েছেন, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল চড়লেও দেশে পেট্রোপণ্যের দাম বহু দিন ধরে স্থির। এর ফলে তারা লোকসানে পড়ছে বলে সরকারকে জানিয়েছে তেল সংস্থাগুলি। দেশ জুড়ে জল্পনা, মন্ত্রীর এই বার্তা কি আসলে তেলের আর এক দফা দাম বৃদ্ধির আগে জমি তৈরির চেষ্টা? কলকাতায় আইওসি-র পাম্পে এখন লিটার পিছু পেট্রল ১০৬.০৩ টাকা, ডিজ়েল ৯২.৭৬ টাকা। একাংশের অভিযোগ, চড়া মূল্যবৃদ্ধিতে কাহিল আমজনতা। আগামী দিনে তেলের দাম আরও বাড়লে তার যুক্তি প্রস্তুত রাখা হল। অন্য অংশের মতে, বিশেষত বেসরকারি তেল সংস্থাগুলির তরফে দাম বৃদ্ধির চাপ বাড়ছে কেন্দ্রের উপরে। তারই প্রতিফলন স্পষ্ট।

Advertisement

মূলত শোধনাগার থেকে ক্রেতার এলাকার দূরত্ব অনুযায়ী বাজার দরে গ্যাস সিলিন্ডার (১৪.২ কেজি) কেনার পরে গত মাস পর্যন্ত সাধারণ এবং উজ্জ্বলা গ্রাহকেরা হয় নামমাত্র ভর্তুকি পেয়েছেন কিংবা পাননি। যেমন কলকাতায় পাওয়া গিয়েছে ১৯.৫৭ টাকা। আবার হলদিয়ার মতো জায়গায় তা আর মেলেই না। গত বছরই কেন্দ্র জানিয়েছিল, তারা এই খাতে ভর্তুকি ছাঁটাই করেছে। কিন্তু চড়া মূল্যবৃদ্ধির আবহে জ্বালানি নিয়ে চাপের মুখে দাঁড়িয়ে সম্প্রতি তেলে উৎপাদন শুল্ক কমানো এবং উজ্জ্বলা গ্রাহকদের ভর্তুকি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কিন্তু এ দিন তেলমন্ত্রী এবং সচিবের বক্তব্য আসলে সাধারণ মানুষকে গ্যাসে ভর্তুকি বস্তুটি ভুলে যাওয়ার বার্তা বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। সংশয় ছড়াচ্ছে গ্রাহকদের মধ্যে। কারণ, অতীতে সরকারি ভাবে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বিনিয়ন্ত্রণের ঘোষণা করা হলেও, গ্যাসের ভর্তুকি বন্ধের আনুষ্ঠানিক নির্দেশ দেওয়া হয়নি।

গত ডিসেম্বর থেকে ১৪.২ কেজির সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে ১০০ টাকারও বেশি। তেলের দামে সুরাহা দেওয়ার জন্য উৎপাদন শুল্ক কমানোর পাশাপাশি তাই রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি বাড়ানোর দাবিও জোরালো হয় দেশ জুড়ে। তেলমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, গত ছ’মাসে বিশ্ব বাজারে রান্নার গ্যাসের দাম ৪৩% বাড়লেও ভারতে বেড়েছে মাত্র ৭%। তার চাপও গ্রাহকের উপরে তেমন পড়েনি কেন্দ্রের উপযুক্ত নীতির জন্য। এমনকি চড়া দামের জেরে উজ্জ্বলায় গ্রাহকেরা সিলিন্ডার কেনা কমিয়েছেন, সেই অভিযোগও উড়িয়ে হরদীপ বলেন, ‘‘এটি সম্পূর্ণ অসত্য।’’

দেশে এখনও পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বিপুল। কেন্দ্র উৎপাদন শুল্ক ছাঁটার পরেও। যে কারণে খাদ্য-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পণ্যের দামও চড়া। ফলে আমজনতা যখন দিশেহারা, তখন পুরী বলছেন তেল সংস্থাগুলির আর্থিক চাপের কথা। তিনি জানান, তেল সংস্থাগুলির দাবি, বিশ্ব বাজারে ফের অশোধিত তেলের দাম চড়ায় দেশে লিটার পিছু পেট্রল ও ডিজ়েলে যথাক্রমে ১৭.১০ এবং ২০.৪০ টাকা লোকসান হচ্ছে। তাই সরকারের সাহায্য জরুরি। তবে কি সেই সাহায্য, তা খোলসা করেননি তেলমন্ত্রী। বরং মনে করিয়েছেন, তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাগুলিই।

এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি লোকসান করলেও জোগান বজায় রেখেছে। অভিযোগ, রিলায়্যান্স-বিপি এবং নায়রা এনার্জির মতো বেসরকারি সংস্থা দেশে জোগান কমিয়ে বিদেশে বেশি দামে তেল রফতানি করে আয় করছে। অনেকে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনে রফতানি বাড়িয়ে বাড়তি ফায়দা লুটছে। শোধনাগারের বিপুল ভান্ডারে অশোধিত তেলের উৎস এবং পরে তার গন্তব্য আলাদা ভাবে যাচাই করা কঠিন, দাবি হরদীপের। তবে তিনি মেনেছেন, সংস্থাগুলি দেশে ঠিক মতো জোগান দিচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন বৈধ। যদিও এ ভাবে সংস্থা বাড়তি লাভ করলে ব্রিটেনের মতো তাদের উপরে কর চাপানো উচিত কি না, সেটা অর্থ মন্ত্রকের বিষয় বলে এড়িয়ে যান তিনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement