সব যুদ্ধ মুখোমুখি লড়়ে জেতা যায় না। বীর যোদ্ধারও আড়াল লাগে। তাতে বীরত্ব খাটো হয় না। মহাকাব্যেই এর প্রমাণ আছে। রাম-রাবণের যু্দ্ধের প্রথম দিনে এই আড়াল-কৌশলেই ঘায়েল হয়েছিলেন রাম-লক্ষ্মণ। যুদ্ধক্ষেত্রে দুই দাশরথী জ্ঞান হারিয়েছিলেন। তাঁদের ধরাশায়ী করেছিলেন রাবণ-পুত্র ইন্দ্রজিৎ। যিনি মেঘনাদ। মেঘের আড়াল থেকে যুদ্ধ করতেন। তাই তিনি শত্রুর নাগাল পেলেও শত্রু তাঁর দেখা পেত না। আড়ালই ছিল ইন্দ্রজিতের মোক্ষম অস্ত্র।
সোজা কথায় শত্রুকে কিস্তিমাত দিতে শুধু অস্ত্র নয়, আড়াল প্রয়োজন। যাতে সাপ মরবে আবার লাঠিও ভাঙবে না। তবে এ সব তো গল্প-সিনেমা-মহাকাব্যে হয়। বাস্তবে কি এমন আড়াল-অস্ত্র পাওয়া সম্ভব?
সম্ভব। শুধু তা-ই নয়, এই ‘অস্ত্র’ বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর কাছে আছেও। গত সাত বছর ধরে ভারতেও ব্যবহার করা হচ্ছে এই ‘অস্ত্র’। দিল্লি পুলিশের সোয়াট টিম চাইলে সেই আড়াল-অস্ত্রের ব্যবহার করে মুহূর্তে হয়ে উঠতে পারে ‘মেঘনাদ’।
আধুনিক সেই ‘অস্ত্রের’ নাম কর্নারশট। মেঘনাদের মতোই এই ‘অস্ত্র’ হাতে থাকলে শত্রুকে দেখা যায়, কিন্তু হামলাকারী থাকেন চোখের আড়ালে।
২০০৩ সালে এই ‘অস্ত্র’ প্রথম তৈরি করেছিল ইজরায়েল। ইজরায়েলের এক সেনাকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আমোস গোলান আধুনিক আড়াল-অস্ত্রের আবিষ্কার করেন। ‘অস্ত্র’ বানাতে ইজরায়েলকে অর্থ সাহায্য করেছিল আমেরিকা।
প্রথমে ইজরায়েলের সোয়াট টিম এই ‘অস্ত্র’ ব্যবহার করলেও পরে আমেরিকার সেনাবাহিনীও কর্নারশটের ব্যবহার শুরু করে।
আড়ালে থেকে হামলা করা যায় বলেই সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে পণবন্দি পরিস্থিতিতে বিশেষ কার্যকরী কর্নারশট।
তবে কর্নারশট আসলে কোনও অস্ত্র নয়। একে অস্ত্রের অলঙ্কার বলা চলে। এমন অলঙ্কার যা অস্ত্রের সঙ্গে জুড়ে দিলে তা ব্যবহারকারীকে আড়ালে থাকতে সাহায্য করবে।
এর দৈর্ঘ্য ৩২.৬৭ ইঞ্চি। ওজন ৩.৮৬ কিলোগ্রাম। কর্নারশটের বিশেষত্ব হল এর সামনের দিকে অস্ত্র জুড়ে সেই অস্ত্র অনেকটা পিছন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অস্ত্রের মুখ ইচ্ছেমতো ঘোরানোও যায়।
কর্নারশটে লাইভ ক্যামেরা আছে। আছে ফ্ল্যাশ বাল্ব্। দিনের আলো হোক বা অন্ধকার— শত্রুর গতিবিধি নজর রাখতে কর্নারশটের বিকল্প নেই। সামান্যতম ন়ড়াচড়া আড়াই ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের রঙিন এলসিডি মনিটরে মুহূর্তে ধরা পড়বে।
সাধারণত কর্নারশটে সেমি অটোমেটিক পিস্তল ব্যবহার করা হয়। তবে তা ছাড়া ৯X১৯এমএম পিস্তল, ৪০ এস অ্যান্ড ডব্লু, ৪৫ এসিপি এমনকি অ্যাসল্ট পিস্তল রাইফেল এবং গ্রেনেড লঞ্চারও ব্যবহার করা যায় কর্নারশটে।
১০০ মিটারের দূরত্বে নিখুঁত লক্ষ্যভেদ করতে পারে কর্নারশট। তবে ৫.৭X২৮এমএম পিস্তলের সাহায্যে ২০০ মিটার দূরের লক্ষ্যও ভেদ করা যায় এটি দিয়ে।
১২টি দেশের সেনাবাহিনীর হাতে এখন কর্নারশট রয়েছে। এদের মধ্যে চিন, রাশিয়া, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক রয়েছে। এ ছা়ড়া কর্নারশটের নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করেছে চিন, পাকিস্তান, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারত।
কর্নারশটের আধুনিকীকরণও চলছে। আধুনিক সংস্করণে আমেরিকার এম১৬ রাইফেল এবং ইউরোপের জয়েন্ট অ্যাসল্ট অস্ত্রও জুড়ে নেওয়া যাবে এতে। সে ক্ষেত্রে আরও কার্যকরী এবং মারাত্মক হয়ে উঠবে আড়াল অস্ত্র।