রবিবার মুম্বইয়ে ইসকনের রাধা গোপীনাথ মন্দিরে ভক্তদের প্রার্থনা। ছবি: পিটিআই।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য রবিবার ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ইসকনের মন্দিরগুলিতে শান্তিপ্রার্থনা করা হল। কলকাতা, শিলিগুড়ি, জয়পুর, গুয়াহাটি, ভুবনেশ্বর, বেঙ্গালুরু-সহ দেশের সর্বত্র ইসকনের মন্দিরে প্রার্থনা এবং কীর্তনের আয়োজন করা হয়েছে। আমেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও ইসকনের শাখা ছড়িয়ে রয়েছে। ১৫০টি দেশ মিলিয়ে ইসকনের প্রায় ৮৫০টি মন্দির রয়েছে এবং এক হাজারেরও বেশি কেন্দ্র রয়েছে। সর্বত্রই স্থানীয় সময় অনুসারে কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে। কিছু অঞ্চলে শান্তিপ্রার্থনার আয়োজন হয়েছে। আবার কোনও কোনও অঞ্চলে প্রার্থনা এবং কীর্তনের আয়োজন এখনও বাকি রয়েছে। ইসকনের কলকাতা শাখার মুখপাত্র রাধারমণদাসকে উদ্ধৃত করে পিটিআই জানিয়েছে, ১৫০টি দেশেই প্রার্থনায় সমবেত হচ্ছেন ভক্তেরা।
রবিবার কলকাতায় অ্যালবার্ট রোডের ধারে ইসকনের শাখায় ভক্তেরা সমবেত হন শান্তিপ্রার্থনায়। শিলিগুড়িতেও ইসকনের রাধামাধব সুন্দর মন্দিরে প্রার্থনায় অংশ নেন ভক্তেরা। রাধারমণ বলেন, “টোকিয়ো থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস, আইসল্যান্ড থেকে নিউজ়িল্যান্ড— বিভিন্ন দেশে আমাদের ৮৫০-র বেশি মন্দির এবং হাজার হাজার ছোট কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে আমাদের কোটি কোটি ভক্ত বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করবে।” তাঁর আশা, প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে শান্তি ফিরবে। ইসকনের বেঙ্গালুরু শাখার সভাপতি মধুপণ্ডিত দাস জানিয়েছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। সে দেশের তদারকি সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। অযোধ্যায় রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র দাসও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পরেও সে দেশের একাধিক প্রান্তে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠে এসেছে। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, দু’দিন আগেই চট্টগ্রামে একটি মন্দিরে হামলা এবং ভাঙচুর হয়েছে। আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়ি ও দোকানেও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ‘ডিডি নিউজ়’-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের শিবচরে ইসকনের একটি কেন্দ্র জোর করে বন্ধ করিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইসকনের কলকাতার মুখপাত্র রাধারমণও সমাজমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। পাশাপাশি, চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির পরে আরও দুই সন্ন্যাসীকে চট্টগ্রাম পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ‘ইন্ডিয়া টুডে’। গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশ শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। তার পর থেকে সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর একের পর এক হামলা চলেছে বলে অভিযোগ। পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদন অনুসারে, হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের ৫০টি জেলায় সংখ্যালঘুদের উপর ২০০টিরও বেশি হামলার অভিযোগ উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্তেও শনিবার এবং রবিবার মিলিয়ে ৬৩ জনকে ভারতে প্রবেশ করতে দেয়নি সে দেশের অভিবাসন পুলিশ। ও পার বাংলার বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের দাবি, তাঁরা ইসকনের ভক্ত। বেনাপোলে অভিবাসন চেকপোস্টের ওসি ইমতিয়াজ মহম্মদ আহসানুল কাদের ভূইঞা ‘প্রথম আলো’কে জানিয়েছেন, ভারতে সন্দেহজনক ভ্রমণ মনে করে ৬৩ জন বাংলাদেশি যাত্রীকে সীমান্ত পার করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
দিল্লি থেকে ইতিমধ্যে একাধিক বার ঢাকাকে অনুরোধ করা হয়েছে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। বিদেশ মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে দিল্লি উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-সহ প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সে দেশের সরকারের, তা-ও জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পুলিশের হাতে সন্ন্যাসীর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘‘আশা করব চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ বিচার হবে। তাঁর আইনি অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকবে।’’
ও পার বাংলায় সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নের মুখে পড়ছে অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও বাংলাদেশের তদারকি সরকারের বক্তব্য, সে দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদই রয়েছেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের ‘হস্তক্ষেপ’ পছন্দ করছে না মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তদারকি সরকারের অবস্থান জানিয়েছেন ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম। রাষ্ট্রপুঞ্জেও বাংলাদেশের তরফে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীন ভাবে ধর্মচর্চার অধিকার রয়েছে। সংখ্যালঘু-সহ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য।