নির্বাচন কমিশন। ফাইল চিত্র।
গুজরাতের ভোটের আগে অরবিন্দ কেজরীওয়াল রাজ্যে বিনা মূল্যে বিদ্যুতের মতো নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, কেজরীওয়াল মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, গুজরাতের রাজকোষের হাঁড়ির হাল করার পথ তৈরি করছেন। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন প্রস্তাব এনেছে, কোনও রাজনৈতিক দল নতুন প্রতিশ্রুতি দিলে তা রূপায়ণে কত খরচ লাগবে, রাজকোষের পক্ষে সেই বোঝা টানা সম্ভব কি না, তা-ও জানাতে হবে।
এই প্রস্তাবে প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচন কমিশন কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পথে হেঁটেই ভোটের আগে খয়রাতি বিলির ঢালাও প্রতিশ্রুতি বন্ধ করতে চাইছে? কারণ, প্রধানমন্ত্রী ভোটের আগে খয়রাতি বিলির প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে বেশ কিছু দিন ধরেই সরব। অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা আঞ্চলিক দলগুলিকে তিনি নিশানা করছেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার রিপোর্টে জানিয়েছে. পশ্চিমবঙ্গের মতো একাধিক রাজ্যে খয়রাতি করতে গিয়ে রাজকোষের হাঁড়ির হাল হয়েছে। প্রশ্নের মুখে নির্বাচন কমিশনের কর্তারা বলছেন, তাঁদের প্রস্তাবের সঙ্গে খয়রাতি নিয়ে বিতর্কের সম্পর্ক নেই। কমিশন নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি আরও ভাল ভাবে কার্যকর করতে চাইছে। আবার এই নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু জানিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছে। নির্বাচনে আরও স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা আনতে জন প্রতিনিধিত্ব আইন ও অন্যান্য বিধিনিয়মে সংশোধন করা হবে।
দুর্গাপুজোর মধ্যেই নির্বাচন কমিশন জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলিকে চিঠি দিয়ে ওই প্রস্তাবে মতামত জানতে চেয়েছিল। কমিশনের প্রস্তাব ছিল, আদর্শ আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলি কোনও প্রতিশ্রুতি দিলে তার পিছনে যুক্তিও ব্যাখ্যা করতে হবে। কিন্তু তাতে যথেষ্ট তথ্য দেওয়ার কথা বলা নেই। কমিশনের নতুন প্রস্তাব হল, কোনও প্রতিশ্রুতি ঘোষণার আগে নির্দিষ্ট খসড়া মেনে রাজনৈতিক দলগুলিকে জানাতে হবে ওই প্রকল্পে কত খরচ হবে। কী ভাবে সেই খরচের জন্য অর্থ জোগাড় করা হবে। তাতে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগারে কত প্রভাব পড়বে, তা-ও জানাতে হবে।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, প্রধানমন্ত্রী খয়রাতির বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পরে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়। এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আদালত একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিলেও কমিশন তাতে শামিল হতে রাজি হয়নি। সিপিএমের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টের কাছে জানিয়েছিল, তারা রাজনৈতিক দলগুলির নীতিগত সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। অথচ এখন তারা উল্টো অবস্থান নিচ্ছে। এর পিছনে কি সরকারি চাপ রয়েছে? রাজ্যসভার সাংসদ, আইনজীবী কপিল সিব্বলের কটাক্ষ, নির্বাচন কমিশনের নিজেরই আদর্শ আচরণবিধি প্রয়োজন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রের যুক্তি, নির্বাচনী সংস্কার, খয়রাতি নিয়ে বিতর্ক এবং কমিশনের প্রস্তাবের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। নির্বাচনী সংস্কার করে ভোটে কালো টাকা আটকানোর পথও খোঁজা হচ্ছে। খয়রাতি নিয়ে বিতর্ক মূলত রাজনৈতিক দলগুলির নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। কমিশন রাজনৈতিক দলগুলির ভোটের প্রতিশ্রুতি ঘোষণার অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে না। শুধু সেই ঘোষণার সঙ্গে আরও তথ্য সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার প্রস্তাব দিচ্ছে।