আগাম জামিন নয়, ‘বেপাত্তা’ চিদম্বরমের নাগাল পায়নি সিবিআই-ইডি

বিচারপতি সুনীল গৌর রায়ে বলেছেন, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমই আইএনএক্স মিডিয়া আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলার ‘কিংপিন’—অর্থাৎ প্রধান ষড়যন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ০৩:১৯
Share:

চিদম্বরম আদালতে দাবি করেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তাঁকে গ্রেফতার করার ছক কষা হচ্ছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা। সিবিআইয়ের ছ’জন অফিসার কড়া নাড়লেন পি চিদম্বরমের দিল্লির জোড়বাগের বাড়ির দরজায়।

Advertisement

মাত্র ঘণ্টা চারেক আগে আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় দিল্লি হাইকোর্ট চিদম্বরমের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। বিচারপতি সুনীল গৌর রায়ে বলেছেন, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমই আইএনএক্স মিডিয়া আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলার ‘কিংপিন’—অর্থাৎ প্রধান ষড়যন্ত্রী।

তার পরে গ্রেফতারি এড়াতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মনমোহন-সরকারের অর্থমন্ত্রী। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে এ দিন শুনানি হয়নি। এর পরেই প্রথমে সিবিআই, তার পরে ইডি অফিসাররা চিদম্বরমের বাড়িতে হাজির হয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তাঁকে হেফাজতে নিতে তারা বদ্ধপরিকর।

Advertisement

দিল্লি হাইকোর্টের রায়

• প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, চিদম্বরম ‘কিংপিন’

• অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনিই বিদেশি লগ্নি আনার অনুমতি দেন আইএনএক্স মিডিয়াকে

• চিদম্বরম জবাব এড়িয়েছেন। তদন্তে সহযোগিতা করেননি

আইএনএক্স মামলা কী?

ইউপিএ জমানায় আইএনএক্স মিডিয়া ৩০৫ কোটি টাকার বিদেশি লগ্নি আনে। যদিও ৪.৬২ কোটি টাকা লগ্নির অনুমতি ছিল। অভিযোগ, ঘুরপথে বাড়তি লগ্নি আনার পথ বাতলে দেওয়ার বিনিময়ে চিদম্বরম তাঁর ছেলে কার্তির সংস্থাকে সাহায্য করতে বলেন। কার্তিকে সাড়ে তিন কোটি টাকা ঘুষ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য সিবিআই, ইডি চিদম্বরমের নাগাল পায়নি। তিনি বাড়িতে ছিলেন না। দুই সংস্থার অফিসারদের মতে, চিদম্বরম ‘গা-ঢাকা’ দিয়েছেন। নিজের অবস্থান লুকোতে মোবাইলও বন্ধ রেখেছেন তিনি। যদিও কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির দাবি, ‘‘চিদম্বরম মোটেই পলাতক নন। ওঁর বিরুদ্ধে কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানাও নেই। উনি আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত আমার চেম্বারেই ছিলেন।’’ বুধবার চিদম্বরমের হয়ে কপিল সিব্বল সুপ্রিম কোর্টে জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আর্জি জানাবেন। সেখানে সুরাহা না মিললে চিদম্বরমের গ্রেফতারি সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে।

২০১০-এ চিদম্বরম যখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তখন সোহরাবুদ্দিন শেখ ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় অমিত শাহকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। অমিতকে তিন মাস জেলে কাটাতে হয়েছিল। অমিত এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আর সিবিআই এবং ইডি চিদম্বরমকে গ্রেফতার করতে তৎপর।

চিদম্বরম আদালতে দাবি করেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তাঁকে গ্রেফতার করার ছক কষা হচ্ছে। আজ কংগ্রেসও চিদম্বরমের পাশে দাঁড়িয়ে একই কথা বলেছে। অর্থনীতির দুর্দশা থেকে অনুচ্ছেদ ৩৭০ রদ করার মতো বিষয়ে চিদম্বরম গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী স্বর ও মস্তিষ্ক হিসেবে কাজ করতেন। রাজ্যসভাতে সরকারকে আক্রমণে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কংগ্রেসের অভিযোগ, এই কারণেই চিদম্বরমকে নিশানা করা হচ্ছে। সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘চিদম্বরম জেরার মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁর তথ্যপ্রমাণ লোপাট করার কোনও উপায় নেই। তিনি পালিয়েও যাচ্ছেন না। তদন্তে সহযোগিতা করার অর্থ সব অভিযোগ মেনে নেওয়া নয়।’’

কত দিন চিদম্বরম গ্রেফতারি এড়াতে পারবেন? বিচারপতি গৌর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করার পরেই দিল্লি হাইকোর্ট থেকে বেরিয়ে যান চিদম্বরম। তাঁর আইনজীবীরা হাইকোর্টের কাছে তিন দিনের রক্ষাকবচ চেয়েছিলেন। যাতে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। শুক্রবার অবসর নিতে চলা বিচারপতি গৌর এই সুরাহাটুকুও দিতে রাজি হননি। এর পরেই কপিল সিব্বল ছোটেন সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির এজলাসে। কিন্তু তত ক্ষণে তাঁর এজলাসে শুনানি শেষ হয়ে গিয়েছে। সিব্বল যান রেজিস্ট্রারের কাছে। তাঁকে বলা হয়, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় কোনও এক জন প্রবীণ বিচারপতির এজলাসে গিয়ে জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আর্জি জানাতে। উল্টো দিকে, সিবিআই, ইডি-ও চিদম্বরমের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে গা ঢাকা দেওয়ার অভিযোগ তুলবে। এর আগে চিদম্বরমের পুত্র কার্তিকে এই আইএনএক্স মিডিয়া মামলাতেই সিবিআই গ্রেফতার করেছিল। প্রায় তিন সপ্তাহ সিবিআই হেফাজতে ছিলেন কার্তি। অভিযোগ, চিদম্বরম কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে পিটার ও ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের আইএনএক্স মিডিয়া গোষ্ঠীকে বেআইনি ভাবে বিদেশি লগ্নি আনার ছাড়পত্র দেন। তার বিনিময়ে পিটার-ইন্দ্রাণী তাঁকে সোজা ও ঘুরপথে ঘুষ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

ইন্দ্রাণী-কন্যা শিনা বরা খুনের মামলায় পিটার ও ইন্দ্রাণী এখন জেলে। ইন্দ্রাণী সম্প্রতি আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় রাজসাক্ষী হতে রাজি হয়েছেন। জুলাই মাসে আদালত তার অনুমতিও দিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই চিদম্বরমকে কাঠগড়ায় তুলতে সিবিআই, ইডি ইন্দ্রাণীর সাক্ষ্যকে কাজে লাগাবে। ইন্দ্রাণী সিবিআই-কে বলেছেন, কার্তির বিভিন্ন সংস্থাকে তাঁরা ৭ লক্ষ ডলার ঘুষ দেন।

এর আগে এয়ারসেল-ম্যাক্সিস মামলাতেও সিবিআই চিদম্বরমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। সম্প্রতি ইউপিএ-জমানায় এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং বিমান কেনায় দুর্নীতি মামলাতেও চিদম্বরমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছিল। এয়ারসেল-ম্যাক্সিস মামলায় নিম্ন আদালতেই আগাম জামিনে পেয়েছিলেন চিদম্বরম। আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় তিনি গত বছর মে মাসে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁকে গ্রেফতারি থেকে রক্ষাকবচও দেওয়া হয়। কিন্তু সিবিআই দফতরে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হলেও চিদম্বরম প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছেন এবং তদন্তে সহযোগিতা করছেন না বলে সিবিআই অভিযোগ তোলে। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জেরার জন্য আর্জি জানায় তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement