সংবাদ সংস্থাকে সাক্ষাৎকার মোদীর। ছবি: সংগৃহীত।
কৃষকদের আন্দোলনের জেরে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করেছে কেন্দ্র। কিন্তু পাঁচ রাজ্যের ভোটের আগে নতুন করে প্রত্যাহৃত কৃষি আইনের সমর্থনে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে তাঁর জবাব, ‘‘যা করেছিলাম, ভালর জন্যই করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে জানতে পারবেন, কেন, কী হয়েছিল।’’ ছোট এবং প্রান্তিক কৃষকেরা কৃষি আইনের পক্ষেই ছিলেন দাবি করে মোদী বলেন, ‘‘আমি কৃষকদের যন্ত্রণা বুঝি। তাঁদের মন জয় করতেও সফল হয়েছি।’’ তবে সেই সঙ্গেই জানিয়েছেন, ‘দেশের স্বার্থে’ তাঁর সরকার বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করেছে তাঁর সরকার।
পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা ভোটে বিজেপি বিপুল ভাবে জয়ী হবে বলে দাবি করেছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা আমাদের কাজ দেখেছেন, তাঁরা ফের আমাদেরই ভোট দেবে। বিজেপি যে রাজ্যগুলিতে সরকার চালাচ্ছে, সেখানে কোনও প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া নেই। বিজেপি প্রতিষ্ঠানমুখী ভোটে বিশ্বাস করে জানিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আগে কাজ হত না, তাই প্রতিষ্ঠানবিরোধী ভোট হত।’’ প্রসঙ্গত, ভোট হতে যাওয়া পাঁচ রাজ্যের মধ্যে চারটি, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গোয়া এবং মণিপুরে বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে। এক মাত্র পঞ্জাবে সরকার চালাচ্ছে কংগ্রেস।
গত বছর নীলবাড়ির লড়াইয়ের সময় বিজেপি-র তরফে ‘ডবল ইঞ্জিন সরকার’ স্লোগান তোলা হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটপ্রচারেও একই কথা বলছে বিজেপি। এ বিষয়ে মোদীর ব্যাখ্যা, ‘‘রাজনৈতিক তরজায় উন্নয়নের গতি ব্যাহত হয়।’’ তাই উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে কেন্দ্র এবং রাজ্যে একই দলের সরকারের পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। বা জিত যাই হোক বিজেপি বরাবরই মানুষের পাশে থাকে এবং প্রতিটি নির্বাচন থেকে শিক্ষা নেয় দাবি করে মোদীর মন্তব্য, ‘‘ভোট আমাদের কাছে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।’’
ভোট থাক বা না থাক, বিজেপি বছরভরই মানুষের পাশে থাকে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা হারতে হারতে জিততে শিখেছি। দীর্ঘ দিন ধরে বহু ভোটে আমরা হেরেছি। আমি তখনও রাজনীতিতে আসিনি। এক বার দেখেছিলেন একটি ভোটে কোনও আসন না জিতেও মিষ্টি বিলি হচ্ছে। জানতে পারি, তিনটি আসনে জামানত বেঁচেছে। তাই উৎসব চলছে।’’
বিজেপি ভারতীয় সংস্কৃতির বহুত্ববাদে বিশ্বাসী দাবি করে মোদী বলেন, ‘দুঃখের বিষয়, এখন কিছু নেতা রাজনৈতিক স্বার্থে একতাকে ভাঙচে চাইছেন।’’ তবে একটি রাজ্য ছাড়া বাকি রাজ্যগুলি তাঁর সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় সহযোগিতা করছে বলে দাবি করেন তিনি। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট শুরুর ঠিক আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর এই সাক্ষাৎকার প্রচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা।
উত্তরপ্রদেশে পূর্বতন সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির সরকারের আমলে অরাজকতা এবং গুন্ডামির রাজত্ব চলেছে দাবি করে মোদীর মন্তব্য, ‘‘যোগী (উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ) অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। এখন অপরাধীরা আত্মসমর্পণ করে বাঁচতে চাইছে।’’ আগের সরকারগুলি উত্তরপ্রদেশে কেবলমাত্র ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতিতে নজর দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পরিবারতন্ত্রকে ভারতীয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু বলে সাক্ষাৎকারে দাবি করেন মোদী। তাঁর কথায় রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে উপেক্ষিত হয় প্রতিভা। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের পাশাপাশি মুলায়ম সিংহ যাদব এবং তাঁর ছেলে অখিলেশের সমাজবাদী পার্টিকেও নিশানা করেন তিনি। বলেন, ‘‘এক বার আমার কাছে একটি চিঠি এসেছিল। তাতে দেখেছিলাম, ওই পরিবারের ৪৫ জন কোনও না কোনও পদে রয়েছেন। ২৫ বছর বয়স হলেই পরিবারের সকলে কোনও না কোনও ভোটে লড়ার টিকিট পেয়েছেন।’’ প্রয়াত রামমনোহর লোহিয়া, জর্জ ফার্নান্ডেজ বা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের মতো সমাজবাদীরা কখনোই নিজেদের পরিবারকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেননি দাবি করে মুলায়ম পরিবারকে খোঁচা দেন তিনি।
উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে রাজনাথ সিংহ, প্রয়াত কল্যাণ সিংহের মতো বিজেপি নেতাদের পরবর্তী প্রজন্ম বিজেপি-র টিকিট পেয়েছে। সেটা কি পরিবারতন্ত্র নয়? মোদীর জবাব, ‘‘না, বড় ফারাক রয়েছে। পরিবারের এক-দু’জন ভোটে দাঁড়ানো এক বিষয়, আর একটি পরিবারই দল চালাচ্ছে, সেটা আর এক বিষয়।’’ সাক্ষাৎকার পর্বে ফের কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে করোনা ছড়ানো এবং পঞ্জাবে তাঁর উপর হামলার অভিযোগও তোলেন তিনি। খারিজ করেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগও।