—ফাইল চিত্র। পিটিআই।
কেউ ঘুমের মধ্যে চমকে উঠছেন। কারও চোখে ঘুম উড়ে গিয়েছে। কেউ জোরে জোরে হাসছেন, কেউ কেউ আবার ঘুমের মধ্যেই আর্তনাদ করে উঠছেন। কেউ আবার নিজের পরিস্থিতি দেখে কাঁদছেন। ওড়িশার বালেশ্বরের এসসিবি মেডিক্যাল কলেজে করমণ্ডল দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে এমনই সব দৃশ্য ধরা পড়ছে।
করমণ্ডল দুর্ঘটনার পর ১০৫ জন আহত যাত্রীকে এই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ৪০ জন ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজ়অর্ডার’-এ ভুগছেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বাড়ির লোকেদের উপস্থিতিতে সেই সব যাত্রীর কাউন্সেলিংও শুরু হয়েছে।
হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চিকিৎসক যশবন্ত মহাপাত্র ‘আজতক’-কে জানান, দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা যাত্রীদের মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করছে। তাঁদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, “এই ধরনের দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া লোকজনের মস্তিষ্কে প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক।” ফলে করমণ্ডল দুর্ঘটনায় আহত যাত্রীদের অনেকের মধ্যেই সেই প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে।
চিকিৎসক মহাপাত্র আরও জানিয়েছেন যে, এ রকম দুর্ঘটনায় কারও মনে গভীর প্রভাব পড়ে। অনেকের মধ্যে উদ্বেগ এবং আতঙ্ক কাজ করে। ফলে কেউ হাসতে থাকেন, কেউ গুম মেরে থাকেন। কেউ কেউ আবার ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে ওঠেন। এই ধরনের আতঙ্ক কাটাতে কাউন্সেলিংয়ের জন্য চারটি দল গঠন করা হয়েছে হাসপাতালে। প্রতিটি দলে এক জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মনস্তত্ত্ববিদ, এক জন সমাজকর্মী এবং রোগীর পরিবারের এক বা দুই সদস্যকে রাখা হয়েছে।
গত ২ জুন বালেশ্বরের বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৮৮ যাত্রীর। আহত হয়েছে এক হাজারেরও বেশি।
‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজ়অর্ডার’ কী?
কোনও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, যেমন কোনও দুর্যোগ, ভয়ঙ্কর মৃত্যুর সাক্ষী হওয়া, অপরাধ বা নির্যাতনের শিকার হওয়ার মতো পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কোনও ব্যক্তি গেলে অনেক সময় তাঁর এই ধরনের মানসিক সমস্যা হতে পারে। এই অবস্থা কয়েক মাস ধরে থাকতে পারে বা বছর ধরেও চলতে পারে। এর ফলে কোনও ব্যক্তির হতাশা, ক্রোধ-সহ নানা বিকার দেখা যেতে পারে। কোনও মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি বা সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুঃস্বপ্ন দেখা এই রোগের লক্ষণ।