বৃত্তটা সম্পূর্ণ হল। বৃহস্পতিবার রাত সওয়া আটটা। কলকাতা থেকে নিয়ে আসা হল ‘বাবলু’কে।
মুম্বইয়ের খার থানায় কার্যত একই ছাদের তলায় এ বার ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর বর্তমান-প্রাক্তন দুই স্বামী এবং এক প্রাক্তন প্রেমিক। পিটার মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব খন্না আর সিদ্ধার্থ দাস। তবে এ দিন তাঁদের একসঙ্গে বসানো হয়নি বলেই খবর। আলাদা আলাদা ঘরে বসিয়ে তাঁদের জেরা করে পুলিশ। সিদ্ধার্থর বয়ান রেকর্ড করা হয়। আগামী কাল তাঁর ডিএনএ নমুনা নেওয়া হবে।
মুম্বই পুলিশের দাবি, শিনা বরা হত্যা রহস্যের সমাধান প্রায় তাদের হাতের মুঠোয়। পুলিশ কমিশনার রাকেশ মারিয়া দু’এক দিনের মধ্যেই সাংবাদিকদের ডেকে জানিয়ে দেবেন শিনা হত্যার মূল কারণ। একটি সূত্র তো এমন দাবিও করেছে যে, লাগাতার জেরার মুখে ভেঙে পড়ে এ দিন শিনাকে হত্যা করার কথা কবুল করেছেন ইন্দ্রাণী। ‘ম্যায়নে কিয়া হ্যায়’, বাক্যটা বেরিয়েছে তাঁর মুখ থেকে। তবে সেটা সত্যিই স্বীকারোক্তি, নাকি গোয়েন্দাদের চাপ সহ্য করতে না পেরে তাঁদের কথায় সায় দেওয়া, সেটা স্পষ্ট হয়নি। আইন অবশ্য বলছে, পুলিশ নয়, আদালতে বিচারপতির সামনে দেওয়া জবানবন্দিই গ্রাহ্য হবে।
বুধবারের মতো এ দিনও সকাল সাড়ে দশটা থেকে খার থানায় বসিয়ে জেরা করা হয় ইন্দ্রাণীর বর্তমান স্বামী পিটার মুখোপাধ্যায়কে। কাল রাতে হাতজোড় করে থানা থেকে বেরিয়েছিলেন। আজ সকালে সাদা টি-শার্ট পরে হাতজোড় করেই থানায় ঢোকেন। দুপুর থেকেই ইন্দ্রাণী ও তাঁর প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীবের জেরাও চলেছে ওখানেই। তার পর রাত সওয়া আটটা নাগাদ আচমকাই এনে হাজির করানো হয় সিদ্ধার্থকে।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, গত কাল পিটারকে প্রধানত তাঁর আর্থিক লেনদেন নিয়ে জেরা করা হয়েছিল। এ দিন মূলত তাঁকে জেরা করা হয় শিনা নিখোঁজ হওয়ার পরেও তাঁর চুপ করে থাকা নিয়ে। এমনকী, রাহুলের দাবি অনুযায়ী তিনি যখন তাঁর বাবাকে শিনার নিখোঁজ হওয়ার কথা বলেছিলেন তার পরেও কেন তিনি চুপ করে বসেছিলেন এ দিন তা নিয়ে জেরা করা হয় পিটারকে। তবে পুলিশের আর একটি অংশের মতে, এ দিনও পিটারকে তাঁর টাকাপয়সা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়েছে। সন্দেহ রয়েছে পিটারের কালো টাকার অঙ্ক নিয়েও। এ নিয়ে খুব শীঘ্রই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে বলে এক পুলিশ কর্তা জানান। রাত পৌনে বারোটা নাগাদ ছাড়া পান পিটার। খানিক পরে ইন্দ্রাণী আর সঞ্জীবকেও খার থানা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশের মতে, এত দিন পিটারের
ছেলে ও শিনার প্রেমিক রাহুল দাবি করে আসছিলেন যে ২০১২-র এপ্রিলের পরে শিনার সঙ্গে বেশ কয়েক বার তিনি যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পরে তিনি ওরলি থানায় গিয়ে পুলিশকে জানান। কিন্তু এ দিন মুম্বই পুলিশের এক কর্তা জানান, ওরলি পুলিশের কাছে রাহুল গিয়েছিলেন এমন তথ্য তাঁদের হাতে আসেনি। তার মানে কি রাহুল মিথ্যে বলছেন? ওই পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘রাহুল মিথ্যা বলছেন, না কি ওরলি পুলিশ, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
পুলিশের একটি সূত্রের মতে, প্রাথমিক ভাবে টাকার জন্যই খুন হতে হয়েছে শিনাকে। শিনার কাছে রাখা ইন্দ্রাণীর অনেক টাকা রাখা ছিল। যে টাকা শিনা দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। অন্য আর একটি সূত্রের মতে, টাকা নয়, ব্যক্তিগত সম্পর্কের নানা জটিলতাই খুনের কারণ। শিনাকে খুন করতে সম্ভবত টাকার টোপ দিয়েই প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব খন্নাকে ডেকে এনেছিলেন ইন্দ্রাণী। সূত্রের মতে, ২০১২ সাল থেকে যে ইন্দ্রাণী নিয়মিত সঞ্জীবকে টাকা পাঠাতেন সেই তথ্যও মুম্বই পুলিশের হাতে এসেছে। সঞ্জীবের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খতিয়ে দেখেছে পুলিশ। ২০১২ সালে শিনা খুনের জন্য আলাদা করে সঞ্জীবকে টাকা দেওয়া হয়েছিল কি না তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।