সাধারণতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো ‘চন্দ্রযান ৩’। ছবি: পিটিআই।
ভারতের ৭৫তম সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে নারীশক্তির জয়জয়কার! শুক্রবার রাজধানী দিল্লির কর্তব্যপথে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ঠাঁই পেল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার ট্যাবলো ‘চন্দ্রযান ৩’। সেই ট্যাবলোয় দেখা মিলল চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্যের নেপথ্যে থাকা ইসরোর ৮ জন মহিলা বিজ্ঞানীর।
গত ২৩ অগস্ট চাঁদের মাটি ছুঁয়েছিল চন্দ্রযান ৩। এই ৮ জন ছাড়াও ইসরোর সেই সাফল্যের শরিক ছিলেন আরও ২২০ জন মহিলা বিজ্ঞানী। ৭৫তম সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রদর্শিত হয়েছে তাঁদের ছবি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে তাঁরা উপস্থিতও ছিলেন কর্তব্যপথে। চাঁদের শিবশক্তি পয়েন্ট, ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞানের ছবিও দেখানো হয়েছে ইসরোর ট্যাবলোতে। এ ছাড়া প্রদর্শিত হয়েছে ভারতের প্রথম সূর্য অভিযান আদিত্য এল ১, যার নেতৃত্বে ছিলেন একজন মহিলা বিজ্ঞানী। ভারতের বাহুবলী রকেট লঞ্চ ভেহিকেল মার্ক ৩-এর একটি মডেল, ভারতীয় স্পেস স্টেশনের ছবি এবং গগনযানের ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। এ দেশের প্রাচীন দুই জ্যোতির্বিজ্ঞানী আর্যভট্ট ও বরাহমিহিরকেও স্মরণ করা হয়েছে ম্যুরালের মাধ্যমে।
শোনা যায়, ইসরোতে নাকি লিঙ্গবৈষম্য রয়েছে। অর্থাৎ, যে কোনও অভিযানে প্রাধান্য পান পুরুষ বিজ্ঞানীরা। সংখ্যার বিচারেও সংস্থায় পিছিয়ে মহিলারা। যদিও এমন অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন সংস্থারই মহিলা বিজ্ঞানী নিগার শাজি। তাঁর কথায়, ‘‘ইসরোতে মহিলাদের জন্য কোনও অদৃশ্য দরজা নেই। এখানে প্রতিভাই একমাত্র বিচার্য, লিঙ্গের কোনও ভূমিকা নেই।’’
একই কথা শোনা গিয়েছে ইসরোর চেয়ারম্যান বিজ্ঞানী এস সোমনাথের মুখে। তিনি জানিয়েছেন, এখানে প্রতিভাটাই মুখ্য। সংস্থার সমস্ত কর্মী নিজেদের জান-প্রাণ দিয়ে কাজ করেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় কর্মরতদের মধ্যে পাঁচ ভাগের এক ভাগই মহিলা। আগামী দিনে আরও বেশি মহিলাকে সংস্থার বিভিন্ন পদে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ইসরোর বিভিন্ন মিশনে আগেও নেতৃত্ব দিয়েছেন মহিলারা। যেমন, ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের প্রধান ছিলেন এম বনিতা। এ ছাড়া আর্থ ইমেজিং স্যাটেলাইট ওশানস্যাট তৈরির দায়িত্বে ছিলেন থেনমোঝি শেলভি কে। চন্দ্রযান ৩ মিশনের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর করা হয়েছে কল্পনা কে-কে। এ ছাড়া ভারতের প্রথম মহাকাশ অভিযানে গগনযানে থাকতে পারেন একজন মহিলা মহাকাশচারী, জানিয়েছেন এস সোমনাথ।
কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান বিষয়ক মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ সম্প্রতি রাজ্যসভায় জানিয়েছেন, দেশের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে মোট কর্মশক্তির ১৬.৬ শতাংশ মহিলা। যদিও গবেষণা, সহায়তা এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাঁদের সামগ্রিক অংশগ্রহণ ধরলে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াবে ১৮.৮ শতাংশে। হিসেব মতো এই সংখ্যাটা হওয়ার কথা ৫০ শতাংশ। বিভিন্ন নারীকেন্দ্রিক প্রকল্পের মাধ্যমে এই বিষয়ে লিঙ্গসাম্য আনার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।