মাউন্ট ইয়ামান্টাউ। রাশিয়ার বাশকোর্তোস্তান অঞ্চলের বেলোরেটস্কি জেলায় অবস্থিত এই পর্বত রহস্যে মোড়া।
ইয়ামান্টাউ, দক্ষিণ ইউরাল বিভাগের সর্বোচ্চ পর্বত এবং দক্ষিণ ইউরাল নেচার রিজার্ভের মধ্যে অবস্থিত একটি পর্বত। এই পর্বতের চারদিক ঘন জঙ্গলে মোড়া। কিন্তু কেন এই পর্বত ভয়ঙ্কর এবং রহস্যে মোড়া?
মনে করা হয়, ইয়ামান্টাউের নীচে পুরোদস্তুর একটি সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে রেখেছে রাশিয়া। এটিকে পৃথিবীর বৃহত্তম সামরিক বাঙ্কার বলেও মনে করেন কেউ কেউ।
মনে করা হয়, ইয়ামান্টাউয়ের ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত সামরিক ঘাঁটি। যদিও রাশিয়ার সরকার কখনও সেই সামরিক ঘাঁটি বা বাঙ্কারের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করেনি।
যদিও ওই বাঙ্কারের অস্তিত্ব সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রমাণ বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যে এসেছে।
১৯৮০ সালের গোড়ার দিকে ইয়ামান্টাউ পর্বতের বাঙ্কার নিয়ে প্রথম জল্পনা তৈরি হয়। উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়ে যে, ওই পর্বতের দক্ষিণ দিকে একটি বিস্তৃত বনাঞ্চল কেটে ফেলেছে রাশিয়া।
তার পর থেকেই নাকি লাগাতার কাজ চলে ইয়ামান্টাউয়ে। এ-ও মনে করা হয় যে, আশির দশকের শেষের দিকে পর্বতের নীচে বাঙ্কার তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলেছিল রাশিয়া।
‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’দের মতে, ইয়ামান্টাউ পর্বতের বাঙ্কারের মধ্যে বেশ কয়েকটি গোপন কক্ষ রয়েছে। সেই সব কক্ষ রাশিয়ার গোপন নথি এবং জিনিসপত্রে ঠাসা বলেও শোনা যায়।
মনে করা হয়, ওই বাঙ্কারে অনেকে একসঙ্গে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বিপদে দীর্ঘ দিন যাতে ওই বাঙ্কারে থাকা যায়, সেই বন্দোবস্তও নাকি রয়েছে।
শোনা যায়, ইয়ামান্টাউ পর্বতের ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার ১০০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ এবং ৬০০ মিটারেরও বেশি গভীর। বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং সুযোগ-সুবিধা নাকি ওই বাঙ্কারে রয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ার ওই গোপন সামরিক ঘাঁটি পরমাণু হামলা রোধ করতেও সক্ষম। নিমেষে শত্রুপক্ষের বিমান ধ্বংস করতে পারে এমন ‘ভূমি থেকে আকাশ’ ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাঙ্করোধী ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি যুদ্ধবিমানও নাকি মজুত রয়েছে বাঙ্কারটির মধ্যে।
শোনা যায়, ওই বাঙ্কারের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রও মজুত রেখেছে রাশিয়া। তৈরি করা হয়েছে বিপজ্জনক সব সামরিক অস্ত্র নিয়ে পরীক্ষা চালানোর জন্য গবেষণাগার।
প্রচলিত বিশ্বাস, রাশিয়ার ওই গোপন বাঙ্কারের মধ্যে কয়েক হাজার মানুষ একসঙ্গে থাকতে পারেন। ওখানে থাকার সময় যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য বাঙ্কারের মধ্যেই নাকি হাসপাতাল, খাবার উৎপাদনের ব্যবস্থা, জল পরিশোধন ব্যবস্থা, এমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রও রয়েছে। রয়েছে হেলিপ্যাড এবং রেলপথও।
তবে রাশিয়া পর্বতের নীচে ওই বাঙ্কার থাকার বিষয়টি বরাবর গুজব বলেই দাবি করে এসেছে। তাই ইয়ামান্টাউ পর্বতকে ঘিরে তৈরি হওয়া রহস্য রহস্যই রয়ে গিয়েছে।
সত্যিই যদি ইয়ামান্টাউ পর্বতের তলায় কোনও বাঙ্কার থেকে থাকে, তা হলে সেটি কোন উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
তবে অন্য কোনও দেশের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে ভূগর্ভস্থ ওই বাঙ্কার রাশিয়ার হয়ে নেতৃত্ব দিতে পারে বলেও মনে করা হয়।
অনেকে এ-ও মনে করেন যে, যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে রাশিয়ার শীর্ষ নেতাদের সুরক্ষিত রাখতে ওই গোপন বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছে।